Oscar 2010: The Hurt Locker & The Secret in Their Eyes

গত ৭ মার্চ তারিখে হলিউডের কোডাক থিয়েটারে হয়ে গেল সিনেমায় সর্বোচ্চ স্বীকৃতি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারের ৮২তম আসর। সাধারণত প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে এই পুরস্কার প্রদান করা হলেও এ বছরই শীতকালীন অলিম্পিকের কারণে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে এ আয়োজন করা হলো। এই আসরের আরেকটি নতুনত্ব হলো এ বছরই প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ সিনেমার জন্য পাঁচটির পরিবর্তে দশটি সিনেমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার সিনেমার দিকে সবাই তাকিয়ে থাকলেও তাকে পাশ কাটিয়ে শ্রেষ্ঠ সিনেমার পুরস্কার জিতে নিয়েছে ক্যাথেরিন বিগলো পরিচালিত দ্য হার্ট লকার। এ ছাড়াও সেরা বিদেশী সিনেমার ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছে আর্জেন্টিনার ছবি দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ।দ্য  হার্ট লকার
ইরাকে আমেরিকান সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত থ্রিলার মুভি দ্য হার্ট লকার। যুদ্ধ চলাকালে বোমা নিষ্ক্রিয় করার কাজে নিয়োজিত স্কোয়াডকে ঘিরে কাহিনীটি লিখেছেন মার্ক বোল যিনি নিজেও ২০০৪ সালে সাংবাদিক হিসেবে এই ধরনের একটি স্কোয়াডে যুক্ত ছিলেন। ক্যাথেরিন বিগলোর পরিচালনায় মুভিটির মূল চরিত্র উইলিয়াম জেমস যার টিমে রয়েছে আরো দু’জন বোমা বিশেষজ্ঞ, তাদের কাজ হলো রেডিওতে যোগাযোগ করা এবং বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় উইলিয়ামকে রাইফেলে কভার করা। উইলিয়ামের কাজের পদ্ধতি তাকে বেপরোয়া হিসেবে পরিচিত করেছে। সময়টা অস্থির কারণ একজনের একটি সামান্য ভুলের কারণে মৃত্যু হতে পারে শত শত মানুষের, তার ওপর রয়েছে বিদ্রোহীদের আনাগোনা। ভিন্ন ধরনের চরিত্রের তিনজন মানুষ কিন্তু সব সময়ই তাদের সতর্ক থাকতে হয় অনাহূত কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে কারণ সেই লোকটিই হতে পারে একজন আত্মঘাতী বোমারু।

মুভিটি ২০০৮ সালে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলেও সারা বিশ্বে মুক্তি পায় ২০০৯ সালের জুন মাসে। ১৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের মুভি দ্য হার্ট লকার মূলত একটি মুক্ত চলচ্চিত্র যার প্রযোজক ক্যাথেরিন বিগলো নিজেই। পরে আমেরিকান পরিবেশক সামিট এন্টারটেইনমেন্ট পরিবেশনার দায়িত্ব নেয় এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সামনে নিয়ে আসে। ক্যাথেরিন বিগলো এর আগে রাশিয়ান সাবমেরিন নিয়ে কে ১৯ : দ্য উইডোমেকার নির্মাণ করে আলোচনায় আসেন। অস্কার প্রতিদ্ব›দ্বী অ্যাভাটার সিনেমার পরিচালক জেমস ক্যামেরনের সাবেক স্ত্রী ক্যাথেরিনই অস্কার জয়ী প্রথম এবং একমাত্র নারী পরিচালক। দ্য হার্ট লকার ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেরেমি রেনার।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক পটভূমিকায় থাকলেও মুভিটির শুটিং হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ জর্ডান ও কুয়েতে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সব সিনেমার মধ্যে দ্য হার্ট লকার অত্যন্ত আলোচিত। এ বছর অস্কার প্রতিযোগিতায় মোট নয়টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়ে ছয়টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে মুভিটি যার মধ্যে সেরা মুভি, সেরা পরিচালক, সেরা চিত্রনাট্য ও সেরা সম্পাদনা উলেখযোগ্য। এ ছাড়াও মুভিটি ২০১০ সালের বাফটা অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে ছয়টি ক্যাটাগরিতে। সাধারণ দর্শকদের পাশাপাশি জনপ্রিয় চিত্র সমালোচকরাও ছবিটির বিষয়বস্তু এবং চিত্রায়নকে স্বাগত জানিয়েছেন।

দ্য  সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ

সেরা বিদেশী মুভির তালিকায় অস্কার পুরস্কার জেতা মুভিটির নাম ঘোষণার দুই সপ্তাহ আগেই বোঝা গিয়েছিল, এবার অন্য কোনো মুভি নয় দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইজই জিতে নেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। কারণ এর ঠিক দুই সপ্তাহ আগেই সেরা স্প্যানিশ মুভির তালিকায় সেরা ছবির পুরস্কার গয়া অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে। গয়া অ্যাওয়ার্ড হলো আমেরিকার একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মতোই সবচেয়ে সম্মানজনক স্প্যানিশ মুভির পুরস্কার। মুভিটির পরিচালক হুয়ান জোসে ক্যাম্পানেলা। গুণী এই পরিচালক এর আগে বিভিন্ন পুরস্কার পেলেও এই প্রথম অস্কার জিতলেন মুভিটির সেরা পরিচালনা ও সম্পাদনার জন্য। আর্জেন্টাইন এই মুভিটি স্পেনের সাথে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। মুভিটি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে, ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে সফল মুভির তালিকায় এর অবস্থান দ্বিতীয়তে।

এদর্দো শায়েরির উপন্যাস দ্য কোশ্চেন ইন দেয়ার আইজ অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটিতে ’৭০ দশকের পটভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। ক্রাইম ধারার এই মুভিটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে বেঞ্জামিন এস্পোসিতো নামের এক ফেডারেল জাস্টিস এজেন্টকে কেন্দ্র করে। নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে নিহত এক নারীর হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পায় সে, সাথে পানাসক্ত সহকারী পাবলো এবং একজন নতুন, সদ্য পাশ করে বের হওয়া উকিল যে মুভির নায়িকাও বটে। প্রায় দুই ঘণ্টার এই মুভিটি নির্মাণে সময় লেগেছে দুই বছরেরও বেশি। মুভিতে ব্যবহৃত একটি ফুটবল খেলার শুটিংয়ের জন্য দুই বছর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল যার সম্পাদনায় সময় লেগেছে পুরো নয় মাস। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বেশি আয় করা মুভির তালিকায় এর অবস্থান প্রথমে এবং বলা হয় আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ বা ২ মিলিয়নের বেশি দর্শক এই মুভিটি উপভোগ করেছে। বলা যায়, অস্কার জিতে নেয়ার মাধ্যমে তার যোগ্য স্বীকৃতিই পেয়েছে দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ।

 

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *