ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড সম্পর্কে ধারনা দেয়ার জন্য ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে। ভারতের তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি কমিটি যারা সিনেমা প্রদর্শন সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় এবং এই কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো সিনেমা ভারতের কোনো প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন নিষিদ্ধ। ভারতের এই প্রতিষ্ঠান মোট চার ধরনের সার্টিফিকেট দেয়।
U- Unrestricted Public Exhibition,
UA – Unrestricted Public Exhibition – but with a word of caution that Parental discretion required for children below 12 years,
A – Restricted to adults এবং
S – Restricted to any special class of persons।
ভারতের এই প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম দেখলে বাংলাদেশের সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাজ কি হবে সেটা আন্দাজ করা যায়। সিনেমাতে রেটিং দেয়া হবে – এবং কিছু কিছু সিনেমা নির্মান উৎসাহিত করা হবে যে সিনেমা সব বয়সের দর্শকের জন্য উপযুক্ত নয়। সেন্সর বোর্ড থাকবে না – বললেই সবার আগে যে আশংকা দেখা দেয় তা হলো সিনেমায় নগ্নতা ও অশ্লীলতার প্রসার ঘটবে। বাংলাদেশে বিদ্যমান ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ সিনেমায় নগ্নতাকে নিরুৎসাহিত করে, যদিও সিনেমায় এই দুই ধরনের মূল্যবোধ সবসময়ই অপেক্ষাকৃত কম প্রভাব বিস্তার করেছে। সময়ের পরিবর্তনে জীবনযাত্রায় এই দুই ধরনের মূল্যবোধের প্রভাবও পরিবর্তিত। ধর্মচর্চা এখন অনেকাংশেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। একই সাথে, ‘ঘরে বসে ডার্টি পিকচার দেখতে পারেন, সিনেমার পর্দায় দেখলে দোষ কি’ – এই যুক্তিতে সিনেমায় সেন্সরবোর্ড বাতিলের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন অনেকেই, তাদের আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘ডার্টি পিকচার’ ধরনের সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে অনেকে মেয়েরা। সেক্ষেত্রে, ফিল্ম সার্টিফিকেশন যুগোপযোগি সিদ্ধান্ত। পরিবেশ যদি তৈরী হয়েই থাকে, আইন তখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
কিন্তু, সেন্সর বোর্ডের সাথে স্বাভাবিকভাবে অশ্লীলতার সম্পর্ক দেখা গেলেও সেন্সর বোর্ডের কাজ শুধু নগ্নতা-অশ্লীলতাকে নিয়ন্ত্রন করা নয়। অন্যদিকে, অ্যাডাল্ট রেটেড সিনেমার বেশীরভাগই নগ্নতা ও যৌনতা সংক্রান্ত হলেও শুধু এই এক কারনে অ্যাডাল্ট রেট দেয়া হয় না; ভায়োলেন্স, ভাষা ইত্যাদি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সিনেমায় নগ্নতা, যৌনতা, ভায়োলেন্স যতটা না প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি বাণিজ্যিক। সুতরাং, সেন্সর বোর্ড উঠে গেলে বা সার্টিফিকেশন বোর্ড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে – এ ধরনের উপাদানগুলোর ব্যবহার বাড়বে এটা সত্যি এবং মিথ্যা দুই-ই। এ সকল উপাদানগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপ্রয়োজনীয়তা, সত্যতা-মিথ্যতা সম্পর্কে আলোচনার আগে জানতে হবে, তথ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সরবোর্ড স্বাধীনতার পর থেকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। গত শতকের শেষ দিক পর্যন্ত সেন্সরবোর্ডকে সিনেমা নিষিদ্ধ করার কাজ করতে হয়েছে অনেক কম। কিন্তু গত শতকের একদম শেষে এসে অশ্লীল সিনেমার জোয়ার শুরু হলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছিল বেশ কবার। অশ্লীলতার সেই যুগে সেন্সরবোর্ড ছিল না – এমন নয়, বরং অক্ষম, দুর্নীতিগ্রস্ত সেন্সরবোর্ড এই অশ্লীলতাকে ঠেকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। দুর্নীতিগ্রস্ত এই সমাজ এখনো এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। শুধু অশ্লীলতার অভিযোগ নয়, বরং রাজনৈতিক কারণে অনেক সিনেমাকে আটকে দিয়েছে সেন্সরবোর্ড। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের আদর্শ, কর্মকান্ড ও নেতাদের সাথে কোনোরকম মিল থাকার কারণে সেন্সরবোর্ডের বাধায় আটকে পড়ার নজির অনেক। ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড কি এই ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে? মুজিব কোট পড়েছে বলে অথবা খালেদা জিয়ার মত ফোলানো চুল আর শাড়ি পড়েছে বলে সিনেমাকে আটকে দেয়া হবে না সেই নিশ্চয়তা কি ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাছ থেকে পাওয়া যাবে? মেহেরজানের মত ভিন্ন চিন্তাধারার সিনেমাকে গিলে ফেলবে না তো নতুন বোর্ড? ফ্রিডম অব স্পিচ থাকবে তো? সিনেমায় নকল প্রতিরোধে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের ভূমিকা কি হবে? যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত হানে কোন সিনেমা, তবে সেক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখবে বোর্ড? ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড যে রেটিং প্রদান করবে, দেশের সকল সিনেমাহলে সেই রেটিং ঠিকমত মেনে চলা হবে এমন নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য কোন পদক্ষেপ কি গ্রহণ করা হবে?
প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ন, পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এদের উত্তর পাওয়া যায় নি। ফিল্ম সার্টিফিকেশন সংক্রান্ত নীতিমালা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, সেখানে কি কি থাকবে সে বিষয়েও কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। বর্তমান সরকার যেভাবে ফ্রিডম অব স্পিচ-কে কষে বেধে ফেলতে চেয়েছেন, তার সাথে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের এই ঘোষনা অসামঞ্জস্যপূর্ন। আমরা আশা করি, এই ঘোষনা আগামী নির্বাচনকে লক্ষ্য করে দেয়া কোন বক্তব্য হবে না, ফিল্ম সেন্সরবোর্ডের অপর নাম হবে না ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড। যদি তাই-ই হয়, তবে নামকরনের ফুটো দিয়ে শুধু অশ্লীল সিনেমাই মুক্তি পাবে, ভালো সিনেমা নয়।
(একই সাথে thebangal.com এ প্রকাশিত)
14 মন্তব্যসমূহ
eto eto prosnogulo uttorhin theke jay.......dekha jak ebar ki hoy...
উত্তরমুছুন@admin, titanic ki oshnil film ! apni to ai film ta dekhesen amrao dekhesi, doya kore ai bapare apmar motamot den.
উত্তরমুছুনস্বাগতম তানজিলুর রহমান।
উত্তরমুছুনটাইটানিক অশ্লীল ফিল্ম সেটা কি আমার লেখায় কোথাও বলেছি? বোঝা যাচ্ছে আপনার নিজের কিছু বক্তব্য আছে - যা বলার বলে ফেলুন। তারপর এ নিয়ে কথা হতে পারে। টাইটানিককে টেনে আনার দরকার নেই।
ধন্যবাদ।
দেখা যাক এবার কি হয় ...
উত্তরমুছুনথ্যাংকস দীপন :)
এ ঘোষণাতে আমি আশাবাদি না। বরাবরের মতই এটাও লোক দেখানো
উত্তরমুছুনএবং শেষ পর্যন্ত আপনার করা প্রশ্নগুলো প্রশ্নই থেকে যাবে :(
মেহেরজান সিনেমা নিয়ে আপনার কোন পোষ্ট থাকলে একটু লিঙ্ক দিবেন। পড়তে চাই। ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনস্বাগতম সমীর চৌধুরী। (ভুল করি নি তো?)
উত্তরমুছুনঅমি রহমান পিয়াল ভাই-ও এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেখলাম। দু:খিত ভাই, আমি এই সিনেমাটা দেখতে পারি নাই। যেদিন দেখার ইচ্ছা ছিল তার আগের দিন হল থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল।
আমার অন্য লেখাগুলো পড়ে দেখতে পারেন। ভালো থাকবেন এবং আবারও আসবেন। ধন্যবাদ।
না আপনি একদম ঠিক লিখেছেন... যেহেতু আপনি সিনেমা দেখার পরে ওই সিনেমা বিষয়ে নিজস্ব মতামত লিখেন তাই জানতে চাওয়া... আমি অনেক আগেই আপনার লেখা পড়েছি। এই বিষয়ে আপনার কিছু থাকলে পড়ার আগ্রহ ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
উত্তরমুছুনতা যেন না হয়, তা যেন না হয়, তা যেন না হয় :(
উত্তরমুছুনশুধু অশ্লীল সিনেমাই মুক্তি পাবে, ভালো সিনেমা নয়। - এটা আমারো মনে হচ্ছে। আগে জাতিকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
উত্তরমুছুনসরকারের এমন পরিকল্পনাতে খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে হয় না। বোর্ড থাকুক বা না থাকুক বাংলা চলচ্চিত্র যেভাবে এগুচ্ছে সেভাবেই এগিয়ে যাবে। এতে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকাটা হবে বোকামি। আর নতুন বোর্ড গঠন হলেও চলচ্চিত্রের উপর তার প্রভাব হবে শুন্য।
উত্তরমুছুনআশংকা যেন সত্যি না হয় তাই কামনা করছি। কিন্তু কামনা সত্যি হবে কিনা সেটা নিয়েও সংশয় :( :(
উত্তরমুছুনআমরা ভালোর চেয়ে মন্দকে খুব দ্রুত গ্রহণ করতে পারি - এটা আশংকাজনক
[...] সেন্সরবোর্ড পরিবর্তিত হয়ে যাবে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডে। সেন্সরবোর্ড থাকা অবস্থায়ই ১৯৯৮ [...]
উত্তরমুছুন[...] চলচ্চিত্র-কে শিল্প হিসেবে ঘোষনা, সেন্সরবোর্ড তুলে দিয়ে গ্রেডিং সিস্টেম চালু করা অন্যতম। [...]
উত্তরমুছুন