শুক্রবার।
দুপুরবেলা। আম্মার পাশে শুয়ে আছি। সোয়া তিনটার একটু পরে সিনেমা শুরু হলো। নাম - পোকামাকড়ের ঘরবসতি। অদ্ভুত নাম। কোন প্রেম পিরিতির নাম গন্ধ নেই। আম্মা পাশ ফিরে ঘুমুতে চাইলেন। আমি তাকে সামান্য তথ্য জুগিয়ে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করলাম - এই সিনেমাটা পুরস্কার পাইছিল, ববিতা আছে। আম্মা পাত্তা না দিয়ে ঘুমুলেন। আমি দেখতে লাগলাম - ববিতার জন্য নয়, ছি ছি ছি তুমি এত খারাপ - খ্যাত খালেদ খান আর চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষার জন্য। কিচ্ছু হচ্ছে না ভাষার ব্যবহার। তাও দেখি। সিনেমাটার কথা উঠলেই যে কয়টা দৃশ্য মনে পড়ে তার একটা হলো - সমুদ্রে একটা বিশাল হাঙ্গর ধরেছে হেলাল খানের দলের জেলেরা। তাকে নৌকায় তোলা হলো, মাছটা নির্জীব পরে আছে, কিন্তু হঠাৎ হেলাল খানের একটি পা নিয়ে নেয় মুখের ভেতরে - হেলাল খান আকাশ বাতাস কাপিয়ে চিৎকার করতে থাকেন। সেই সময়ের তুলনায় বেশ কিছু সাহসী দৃশ্যও মনে পরে বৈকি।
২.
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে কোর্স করার সময় একদিনকার ঘটনা। দশটা থেকে ক্লাস। সাড়ে নটার দিকে এসে দেখি বাহিরের রুমে ছোটখাটো একটা মানুষ, চোখে চশমা, টেবিলের উপর একটা শান্তিনিকেতনি ব্যাগ রেখে অসহায়ের মতো বসে আছেন। কারণ - তাকে গ্রহন করার মতো কেউ সেদিন ঘটনাক্রমে অফিসে ছিল না। পাত্তা দিই নি, কে না কে !
ঠিক দশটায় ক্লাসরুমে এসে ক্লাস নেয়া শুরু করলেন। স্ক্রিপ্ট রাইটিং। নিজের পরিচয় দিলেন নিজেই, আখতারুজ্জামান। পরে জানা গেল তিনিই সেই বিখ্যাত সিনেমা - পোকামাকড়েরর ঘরবসতি সিনেমার পরিচালক।
পড়ালেন -গল্প করলেন। পাচটায় ক্লাস শেষ হবার কথা, সেই ক্লাস চলতে লাগলো ছ'টা, সাড়ে ছটা পেরিয়ে সাতটা পর্যন্ত। এক ক্লাসের তুলনায় কত ডিটেইল আলোচনা করলেন সেটা বোঝা গেল - যদিও গল্প একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল। ক্ষতি কি, সিনেমার পড়াশোনার একটা বড় অংশই তো আড্ডাবাজি।
৩.
পত্রিকায় সংবাদ এলো - এবারের যে কটা চিত্রনাট্য অনুদান পেয়েছে তার মধ্যে আখতারুজ্জামানের 'সূচনা রেখার দিকে' অন্যতম। ভালো লাগলো। প্রায় ১৪ বছর পরে আরেকটি সিনেমার কাজ শুরু করলেন, ১৪ বছরের অর্থকষ্ট দূর হলো সরকারের অনুদানে। সেই সিনেমার কাজ শেষ হবে কি হবে না সেটাও নির্ভর করে অনুদানের উপর - টাকা পয়সার এতই অভাব।
৪.
আখতারুজ্জামান স্যারকে নিয়ে গত দুই দিনে ফেসবুকে কেউ স্ট্যাটাস দেয়নি - দুই তিনজন ছাড়া। কেউ ব্লগ লিখেনি - এক দুইজন ব্যতীত। কারণ একটাই - আখতারুজ্জামান স্যার চলচ্চিত্রপরিচালক ছিলেন না, সব মিলিয়ে তার পরিচালিত সিনেমা চারটি - ফেরারী বসন্ত (যৌথভাবে), প্রিন্সেস টিনা খান, নগ্ন আগন্তুক এবং পোকামাকড়ের ঘরবসতি। কিন্তু চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবে তার সিনেমা অনেক - পিঞ্জর, ফকির মজনু শাহ, রক্ত পলাশ তার কয়েকটি।
৫.
আখতারুজ্জামান স্যার গতকাল ২৩শে অগাস্ট, ২০১১ সালে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন। বন্ধু মাজহারুল রাজুর সাথে কন্ঠ মিলাই -
ছিড়ে গেছে চলমান ফিল্মের রীল, গভীর রাতে হয়ে গেলেন জীবন থেকে নেগেটিভ; একেবারে চিরতরে ফেড আউট ! যার মুখ থেকে শুনে, ২৪ ফ্রেমকে জীবনের সাথী করেছি সেই মানুষটি 'স্যার আখতারুজ্জামান' কিছু না বলে অভিমান ভরে জাম কাট দিয়ে চলে গেলেন।
10 মন্তব্যসমূহ
পোকামাকড়ের ঘরবসতি' অনেকদিন আগে টিভিতে দেখেছিলাম। সেন্টমার্টিনের ভাষা চট্টগ্রামের ভাষা থেকে কিছুটা আলাদা বোধহয়। তবে এই সিনেমায় সেটারও ঘাটতি ছিলো। তখন যদিও এই জাতীয় সিনেমা থেকে সাধারণ বাঙলা সিনেমাই ভালো লাগত বেশি, তারপরও একা একা আপনার মতো পুরাটাই দেখেছিলাম। সুন্দর নির্মাণ। ঠিক।
উত্তরমুছুনকালকে খবরটা শোনার পর সূচনারেখায় তার সাথে কাজ করছে এমন একজনেকে কল দিলাম। মোবাইল বন্ধ। তার কাছে আখতারুজ্জামানের অনেক গল্প শুনেছিলাম। আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবার কথা বলেছিলেন। সেটা আর হলো না। নেট ঘেটে তাকে নিয়ে কোন লেখা পেলাম না। আপনার এই লেখা দলিল হয়ে থাকল। চেষ্টা করুন একটা পূর্ণাঙ্গ লেখা দিতে পারেন কিনা। অসংখ্য ধন্যবাদ।
পূর্নাংগ লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আপনি যা বললেন তাই, কোন তথ্য নেই তার সম্পর্কে। নিজে তো কাছ থেকে দেখেছি শুধু, এত ভালো পরিচয় নেই যে কিছু বলতে পারি। সুতরাং এই সব :(
উত্তরমুছুনপোকা মাকড়ের ঘর বসতি অনেক ছোট থাকতে দেখেছিলাম, অনেক ভাল লেগেছিল (বা'ষার সমইস্যা আন আঁরা সাটগাইয়াঁ অলে বেজ্ঞুনে বুঝি, বাঊরগা অলর লাই আঁরার বা'ষা ফারন নান এক্কা হটিন) । আর তিনি 'পরিচালক ছিলেন না' এ কথাটার প্রতিবাদ জানাচ্ছি!
উত্তরমুছুনতবে মৃত্যুর পরে হলেও তাকে নিয়ে লেখা হচ্ছে সেটাই অনেক। বাংলাদেশের অর্থ-রাজনৈতিক বিবেচনার সংস্কৃতিতে প্রভাবশালী ছাড়া আর কাঊকে নিয়ে লেখার তো তেমন কোন চল নেই!
তবে আপনার কাছ থেকে অন্তত আরো আগেই এ লেখা টা আসতে পারতো।
যারা এখন মরে যায়নি তাদের নিয়ে ও লিখবেন আশা করি।
শুভ কামনা রইল।
স্বাগতম দারাশিকোর ব্লগে। :)
উত্তরমুছুনআপনার প্রতিবাদ সাদরে গৃহীত হলো, আখতারুজ্জামান স্যার মূলত চিত্রনাট্যকার ছিলেন, পরিচালক নন, এ কারণেই উপরোক্ত মন্তব্য। আমাদের দেশে সিনেমা পরিচালকরাও খুব একটা গুরুত্ব পান না অনেক সময়, চিত্রনাট্যকারদের তো দুরাবস্থা। তবে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে এমনটাই আশা করি।
চট্টগ্রামের বাষা এট্টু কটিন, সে মানি, এ কারণেই বুঝতে পারছিলাম যে হচ্ছে না একদম।
আবার আসবেন :)
Sir amder majhe ar nei. khub kharap lagche. tar thekeo bseshi kharap lagche j tak akber sroddha janano holo na. sir to akta holeo valo film koreche. sheto ar shobar moto commercial film banayni. she ki film ar jonno kichui koreni....so sad
উত্তরমুছুনপোকামাকড়ের ঘরবসতি সিনেমার নাম শুনেছি অনেক, দেখিনি এখনও, পরিচালকের নামটি জানতাম না।
উত্তরমুছুনআমি এমনকি ইঙ্গমার বারিমান এর নামও শুনেছিলাম তার মারা যাওয়ার পরদিন, পত্রিকার খবর দেখে, তারপর বারিমান দেখা হয়েছে অনেক।
আশাকরি আখতারুজ্জামানের সিনেমা হাতে পাবোই...
অনেক ধন্যবাদ উনাকে নিয়ে লিখার জন্য। বাংলা উইকিতে একটা এন্ট্রি করলাম:
- http://bn.wikipedia.org/wiki/আখতারুজ্জামান_(চলচ্চিত্রকার)
বস আছেন কেমন?
উত্তরমুছুনঅনেক দিন খবর নাই আপনার, সেই জটিল সিনে রিভিউ আর লিখছেন না দেখলাম। খুব ব্যস্ত নাকি?
উইকির পেজটা খুলে কি যে উপকার করলেন বলে বোঝানো যাবে না, এখন যদি আখতারুজ্জামান স্যার সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়, নাহয় হারিয়ে যেতো আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই।
ধন্যবাদ মুহাম্মদ ভাই, আপনার অনলাইন আন্দোলন ভালো লাগলো দেখে :)
পোকা মাকড়ের ঘর বসতির নায়কের নাম হেলাল খান নয়। তার নাম খালেদ খান যুবরাজ। তার স্ত্রী মিতা হক, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। বর্তমানে খালেদ খানের পায়ে সমস্যা থাকায় অভিনয় থেকে দূরে আছেন। তারপরও অসুস্থ পা নিয়ে কয়েকদিন আগে তিনি ‘আহ’ সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন।
উত্তরমুছুনপোকামাকড়ের ঘর বসতি সিনেমাটা আমি দেখেছি। দুটো জিনিষ আমার ভাল লাগেনি। মোটা হয়ে যাওয়া ববিতাকে সুন্দরী যুবতীর চরিত্রে মেনে নেয়াটা কষ্ট কর ছিল।(ববিতা সম্ভতঃ সিনেমাটার প্রযোজক)। 2য়তঃ হাঙ্গরটাকে অনেক বেশী কৃত্রিম মনে হয়েছে। এই সমস্ত ডামি জাতীয় দিকগুলোতে বাংলাদেশের আরো উন্নত হওয়া দরকার। এছাড়া সিনেমাটা ভালো লেগেছে। এমন সিনেমা আরো হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, সামুতে আমার একটা একাউন্ট আছে। তবে সিনেমা নিয়ে এযাবৎ একটার বেশী পোষ্ট দেয়া হয় নাই। ভাল থাকবেন।
দারাশিকো'র ব্লগে স্বাগতম ভাইয়া।
উত্তরমুছুননামে যে ভুল করেছি সেটা এতদিনেও চোখে পড়েনি - সম্ভবত নাটকে তার নাম হেলাল ছিল, তাই না? বাচ্চাকালের কথা -মনে আছে এই ঢের :)
ববিতাকে কেমন উপস্থাপন করা হয়েছিল সেটা খুব একটা মনে নেই - অনেক আগের কথা। তাছাড়া তন্বী ববিতাকে দেখা হয়নি খুব একটা, তাই তুলনা করতে পারিনি। আর হ্যা ডামিটা আসলেই খুব কাচা ছিল - তবে সেই সময়ের তুলনায় খুব মন্দ হয়নি। এখন নির্মান করলে হয়তো আরও ভালো করা যাবে। স্যারের নতুন সিনেমাটা সম্পর্কে খুব বেশী জানা নেই।
আবারও আসবেন :)
[...] সিনেমায়। ছবির পরিচালকের নাম আখতারুজ্জামান, যিনি পরবর্তীতে ‘পোকামাকড়ের [...]
উত্তরমুছুন