উঠতি মুলো নাকি পত্তনেই বোঝা যায়। সেভেন ইয়ারস ইন টিবেতের প্রথম পাচঁ মিনিট দেখলেই বোঝা যায়, সামনে যা অপেক্ষা করছে তা হতাশ করবার নয়। হাইনরেখ হারার নামের এক জেদী অস্ট্রিয়ান মাউন্টেইনার ঘটনাচক্রে তিব্বতে সাত বছর কাটান। এই সাত বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী নিয়েই সেভেন ইয়ারস ইন টিবেট তৈরী। মূল কাহিনী একই নামের বায়োগ্রাফি।
সিনেমার পরিচালক জ্য জ্যাক আনুদ (Jean-Jacques Annaud), জাতিতে ফ্রেঞ্চ। এই গুণী পরিচালক সাধারণত ফ্রেঞ্চ ভাষায় মুভি নির্মান করলেও দুএকটি মুভি ইংরেজি ভাষায় নির্মান করেছেন এবং সুনাম কুড়িয়েছেন। সেভেন ইয়ারস ইন টিবেট নির্মানের পূর্বে শন কররি অভিনিত "দ্য নেম অফ দ্যা রোজ" এবং পরবর্তীতে "এনিমি অ্যাট দ্য গেটস" মুভির মাধ্যমে তার গুণপনার প্রকাশ দেখিয়েছেন।
তিব্বতে সাত বছর ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রাড পিট। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই মুভিতে ভিন্ন ধরনের অভিনয় প্রতিভা দেখিয়েছেন পিট। মাউন্টেইনার হেইনরিখ জার্মান সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ভারতের নাঙ্গা পর্বত জয়ের অভিযানে বের হয়, নেতৃত্বে পিটার। গোয়ার চরিত্রের হেইনরিখ বিভিন্ন সময় নিজের সিদ্ধান্তে চলতে চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। পৃথিবী থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন, কিন্তু পর্বত জয়ের দৃঢ় প্রত্যয়। প্রচন্ড হিমঝড়ের ফলে পিছু হটতে হয়। এবং গ্রেপ্তার হয় ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর দ্বারা। কারন ততক্ষনে শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেখানে প্রতিপক্ষ জার্মানী।
বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বী তিব্বতের অধিবাসীদের শান্তিকামীতা ফুটে উঠেছে বিভিন্ন রীতি নীতির মাধ্যমে । এর মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, চীনে কম্যুনিস্ট বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে। তিব্বত আগ্রাসনের আকাঙ্খা প্রকাশ করলে ভীতিজনক পরিবেশ তৈরী হয় তিব্বতিদের মধ্যে। যে তিব্বতিরা সামান্য কেঁচোর প্রাণ বাচানোর জন্য কাজ বন্ধ রাখতে দ্বিধা করে না সেই তিব্বতিরাই এবার নিজেদেরকে বিদেশী আগ্রাসনের হাত থেকে বাচানোর জন্য পুরাতন বন্দুক আর কার্তুজ তুলে নেয়। কিন্তু প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর দ্বারা কচুকাটা হতে হয়। বলা হয় চাইনিজ সেনাবাহিনী এ সময় বহু ধর্ম সন্ন্যাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে। এই আগ্রাসনের কিছু দৃশ্য ফুটে উঠেছে সিনেমায়। অবশ্য এর ফল তাই হয়েছে যা হবার কথা - চীনে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই সিনেমাটি।
তিব্বতিদের জীবন যাপন সম্পর্কে ধারনা লাভ করার জন্য সিনেমাটি আদর্শ। একই সাথে কম্যুনিজম বিরোধীদের হাতে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ এই মুভি। বলা হয় এই যুদ্ধ ছিল সর্ম্পূর্ন চাপিয়ে দেয়া। এবং সে সময় প্রায় ৪০০০০ সৈন্য তিব্বতে প্রবেশ করেছিল যারা প্রায় ৮৭ হাজার তিব্বতিদের প্রাণ সংহারের কারণ হয়েছিল।
ভিন্নদেশী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে চাইলে এই মুভিকে বাদ দেয়া উচিত হবে না।
1 মন্তব্যসমূহ
আমার দেখা অসাধারন ছবিগুলোর একটি।ব্রাডপিট এর ভক্ত হয়েছি এই ছবি দেখার পরপর।তিব্বতীদের জন্য অনেক মায়াই হয়েছে এই ছবিটী দেখে।বাস্তব কাহিনীর ভিত্তিতে তৈরী জানাতে আরো বেশি ভাল লেগেছে।
উত্তরমুছুনযে হেনরিক হারের ব্যাক্তিজীবনীর উপর ছবিটি রচিত তার লিঙ্কটা দিলাম।
http://en.wikipedia.org/wiki/Heinrich_Harrer