১৯৯২ সালে বিশ্ব মিউজিকে যুক্ত হলো আরেকটি কালজয়ী গান, গানের নাম নভেম্বর রেইন, ব্যান্ডের নাম গানস 'ন রোজেস। হার্ড রক ধাঁচের এই গানটি ওই বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অবশ্য এই জনপ্রিয়তার মূল কারন একক ভাবে লিরিক, কিংবা গায়কী সুরকে নির্দিষ্ট করা যায় না, বরং গান রিলিজের কিছু পরেই এর মিউজিক ভিডিওটি মুক্তি পায় এবং বিশ্ব মিউজিকের তালিকাসমূহের শীর্ষে অবস্থান করে নেয় এবং এখনও স্থান দখল করে আছে।১৯৯২ সালের জুন মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ইউজ ইয়োর ইল্যুশন-১ (Use Your Illusion I) এর ১০ নম্বর ট্র্যাক নভেম্বর রেইন। গানটি লিখেছিল ব্যান্ডেরই সদস্য এক্সেল রস (Axl Rose)। পরবর্তীতে গানটির মিউজিক ভিডিওতে এক্সেল রস এবং ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা অভিনয় করে। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই মিউজিক ভিডিওটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও গুলোর মধ্যে নবম অবস্থানে রয়েছে। নান্দনিক চিত্রগহন এবং গল্প বলার ঢং ভিডিওটিকে ইতিহাসের অংশ করে রেখেছে।
যদিও নভেম্বর রেইন গানটি ১৯৯২ সালে প্রথম মুক্তি পায়, ব্যান্ডের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ট্র্যাসি গানস এর দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানা যায়, ১৯৮৩ সাল থেকেই এই গানটি লেখা শুরু করে এক্সল রস। বিশেষ করে পিয়ানোতে বিভিন্ন সময় বাজিয়ে প্রাকটিস করার সময় অন্যদের নজর কাড়ে কিন্তু পরিপূর্ন না হওয়ায় প্রায় ৯ বছর পর মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। এর আগে প্রায় পাচ মিনিটের জন্য এই গানটির জ্যামিং পাওয়া যায় কোন এক অ্যালবামে, যদিও এর দৈর্ঘ্য ৮ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড।
মিউজিক ভিডিওটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে ঐ বছর এমটিভির সব্বোর্চ্চ অনুরোধপ্রাপ্ত ভিডিওতে পরিনত হয়েছিল। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ সিনেমাগ্রাফির জন্য এমটিভির পুরস্কার জিতে নেয়। ভিডিওতে এক্সেল রস এর তৎকালীন প্রেমিকা স্টিফেনী সেম্যূর অভিনয় করেন যার বিয়ের পোশাকের জন্যই ৮০০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছিল।
httpv://www.youtube.com/watch?v=tbkG6Za6w5s
ভিডিওতে থিয়েটারে লাইভ পার্ফম্যান্সের পাশাপাশি এক্সেল রস আর তার প্রেমিকার সাথে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা যায়, যেখানে ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকে। ভিডিওতে লিড গিটারিস্ট স্ল্যাশ (Slash) একটি গুরুত্বপুর্ণ রোল প্লে করে যা ভিডিওটিকে অমরত্ব লাভ করতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে হেলিকপ্টার শটে গীর্জার বাইরে খোলা প্রান্তরে দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে গীটারে ঝড় তোলার দৃশ্য এবং পরবর্তীতে ক্রেন্ শটে রসের পিয়ানোতে দাড়িয়ে গীটারে আরেকটি ঝড় তোলা - গায়কী ভঙ্গি আর সিনেমাটোগ্রাফী সব মিলিয়ে দর্শকের হৃদয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
স্টিফেনী স্যেমুর তার অভিনয়েও যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিয়ে শেষে দৌড়ে গাড়িতে উঠার পর পরই মুখের ভঙ্গিতে যে তীব্র পরিবর্তন তা তার অভিনয়ে নিপুণতার পরিচয় দেয়। পিয়ানোতে বসে এলেক্স রসের আঙ্গুলগুলো যেনো উদ্দমতার সাথে নেচে বেড়াচ্ছিল।
ডেল জেমস এর ছোট গল্প "উইদ আউট ইউ" কে ভিত্তি করে মিউজিক ভিডিওটি তৈরী হয়েছে। ভিডিওর মাধ্যমে একটি গল্প বলা হয়েছে যার মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্য দ্বারা সুরিয়্যেল ভাবনার প্রকাশ পায়। শুরুতে রস ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে যাবার পরেই কনসার্ট হলে বসে পিয়ানো বাজানোর দৃশ্য দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, একই রক
ম দ্বন্দ্বের দেখা পাওয়া যায় বিরান প্রান্তরে বসে একাকী পিয়ানো বাজানোর পরের দৃশ্যেই লোক ভর্তি কনসার্ট হলের দৃশ্যে। আবার যীশুর চোখ দিয়ে রক্তাশ্রু গড়িয়ে পড়া যেন অনেকটা গভীর দু:খের পরিচয় প্রকাশ করে।
ভিডিওতে সামান্য কমেডি দৃশ্যও দেখা যায়, যখন স্ল্যাশ বিয়ের আংটি খুজে পায় না, কিন্তু পরেই আরেক সদস্যের কাছ থেকে পাওয়া আঙটি দিয়ে বিয়ের কাজ সমাধা হয়। আঙটি দিয়ে আসার পর টপ থেকে নেয়া চার্চ থেকে বেরিয়ে যাবার দৃশ্যে স্ল্যাশ যথার্থই দু:খী। তারপরই মরূভুমির বুকে তার গিটার সলো।
ভিডিওতে মিউজিকের পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। বাঁশীর চিকন সুর পাওয়া যায় মাঝে মাঝেই। শেষের দিকে কোরাসের মধ্য দিয়ে যেন হাহাকার উচ্চারিত হয়।
সব কিছু মিলেই যে নভেম্বর রেইন তৈরী হয়েছে তা বিশ্বের সেরা রক গানের অনেক তালিকায় প্রথম অবস্থান দখল করে রয়েছে, সবচে' ব্যয়বহুল ভিডিওর তালিকায় নবম স্থান তো রয়েছেই। সকল সদস্যের একনিষ্ঠ চেষ্টা আর সাধনায় একটি গান হয়ে উঠেছে অমর, অজেয় আর সেরা।
12 মন্তব্যসমূহ
গানটা ভালো লাগতো আগে থেকেই। আজ ইতিহাসটা জানা হয়ে গেলো
উত্তরমুছুনধন্যবাদ দারাশিকো ভাই :)
গান্স এন রোজ ভালবাসি ছোট্টবেলা থেকে।কন্সার্ট এ এক্সন রস এর উন্মাতাল আচরণ,স্লাশ এর 'কোপানো লিড' আর নকিং অন দা হেভেন্স ডোর গানটার প্রতি আমার ভালবাসা আলাদা।নভেম্বর রেইন সম্পরকে এত জানতে পেরে আমি মহা খুশি।দারাশিকো ভাইরে থ্যাংকস।।
উত্তরমুছুনইশতিয়াককেও ধন্যবাদ। নকিং অন দ্য হেভেন্স ডোর শুনলাম বার কয়েক। ভালো লেগেছে... মিউজিক ভিডিও খুজতেসি... :)
উত্তরমুছুনদারুন একটা গান। আমি গত ১৯ বছর ধরে শুনছি। এখনও চমৎকার লাগে। স্ল্যাশের সাথে শ্যাডো গিটারিং করেনি, এমন রক মিউজিকপ্রেমী পাওয়া যাবে না।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনার সুন্দর লেখাটার জন্য।
ওপসসস... ১৯ বছর !
উত্তরমুছুনস্বাগতম রাইসুল জুহালা। আসবেন মাঝে মধ্যে :)
স্ল্যাশ একটা মাল :D
উত্তরমুছুনএমনকি হালায় যখন মাইকেল জ্যাকসনের সাথে গিয়া জুড়সিলো তখনো ভাল্লাগতো ক্যান জানি
গানস এন রোজেস এর ওই সময়ের লাইন আপটা ডেডলি ছিলো আসলেই।
এরা, মেটালিকা, আয়রন মেইডেন আর ম্যানোয়ার দিয়াই ছোটবেলায় হেভী মেটাল শোনা শুরু।
মিউজিক ভিডিও নিয়া রেগুলার লেখো নাজমুল।
amar alltime fav song..........:) tumi na movie nie likhta??? Gaan e shift korla naki??
উত্তরমুছুনস্ল্যাশ যে মাল সেইটা এখনো রকস্টারদের দেখলে বোঝা যায় - এরা গিটার নিয়া দাড়ানোর সময় স্ল্যাশ এর মতো করে দাড়ায়, চুলটারেও তার মতোই সাজায়। :)
উত্তরমুছুনএই গানটা প্রথম দেখছিলাম জুন ভাইয়ের অফিস কাম বাসায় (একতলায়)। কি বলবো সেইদিনই গানটা অন্তত দশবার দেখছি পর পর। মারাত্মক।
আসলে কাইয়ূম ভাই, সিনেমা যেমন দেখা হয় তেমন করে মিউজিক ভিডিও দেখা হয় না - তাই চাইলেও লিখতে পারি না। কিছু দারুন ভিডিও রেফার করবেন নাকি?
ঢাকা আসলেন না?
দারাশিকো'র ব্লগে স্বাগতম তাসমিন :)
উত্তরমুছুনআসলে শুধু মুভি নিয়া না, আমি লিখতে চাই অডিও ভিজ্যুয়ালস নিয়ে - মিউজিক ভিডিও এর মধ্যেই পড়ে। তাই শিফট করার সুযোগ নাই - টেস্ট চেঞ্জ করা আরকি :)
তোমার অলটাইম ফেভারিট আরও কিছু গানের লিস্টি দাও না - দেখি আমার সাথে মিলে কিনা :)
আমার অলটাইম ফেভারিট গান একটা । এখনো মাঝে মাঝে শুনি খুব ভালো লাগে । কিসুটা ইতিহাস জানতাম কিন্তু এত ডিটেলস জানতাম না । ভালো লিখসেন ভাইয়া । কিপ ইট আপ । আরও রিভিউ লিখবেন মিউজিক ভিডিও নিয়ে ।
উত্তরমুছুন:)
উত্তরমুছুনধন্যবাদ ভাইয়া। কয়েকটা দারুন মিউজিক ভিডিওর লিস্টি দেন - দেখি :)
উত্তরমুছুন