টাকায় কেনা সুখ-স্বস্তি

দারাশিকো ভাই, টাকা দিয়ে কি আলো বাতাস কেনা যায়?
যায় না।
সুখ-স্বস্তি?
না।
প্রিয়জনের সঙ্গ কেনা যায়?
সাধারণভাবে কেনা যায় না। কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি অন্য কিছু মিন করছো। কি ব্যাপার?
কেনা যায় ভাই। ঢাকা শহরে টাকা দিয়েই এসব কিনতে হয়।
তুমি কিনেছো?
জ্বি ভাই।
কিভাবে?
বিয়ের পরের মাসেই আমি বউ নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছি। অফিস শেষে রাতের বেলায় বাসা খুঁজতে হত। প্রথম বাসা, অভিজ্ঞতা কম। সাড়ে আট হাজার টাকায় একটা বাসা ভাড়া করে ফেললাম।
কোথায়।
মিরপুরেই ভাই। বিয়ের পর থেকেই আমি মিরপুরে থাকি।
তারপর?
বাসায় উঠে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম একটা রুমে কোন জানালা নেই। সিড়ির দিকে বাতাস বের করে দেয়ার জন্য একটা এক্সহস্ট ফ্যান আছে, সেটাও নষ্ট। দুইজন মানুষ। বেডরুমে আলো বাতাস আছে, আমরা দুজন সারাদিন বাসায় থাকি না, বাসায় গেস্টও আসে না। সুতরাং আমাদের কোন সমস্যাও হল না। তাও ছাড়তে হল।
কেন?
আলো বাতাস কিনবো বলে।
বুঝিয়ে বল।
বেডরুমের সাথেই বারান্দা। তার ঠিক ওপাশেই একটা বিল্ডিং উঠে পড়ল ছয় মাসের মধ্যে। এতই কাছে যে দুই বিল্ডিং এর মানুষ হ্যান্ডশেক করতে পারবে। বেডরুমে যেটুকু আলো বাতাস ছিল, বন্ধ হয়ে গেল। ফলে এই বাসাটা ছেড়ে দিয়ে কয়েকটা বিল্ডিং পরেই একটা বিল্ডিং এ বাসা নিলাম। এই বাসাটায় আলো বাতাস আছে। পাশের প্লটে শীঘ্রই বাড়ি তৈরির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ভাড়া বেড়ে গেল দেড় হাজার, প্লাস গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ।
দেড় হাজার টাকায় তুমি আলো বাতাস কিনেছো, এই তো?
জ্বি ভাই।
এখন বুঝতে পারছি কিভাবে টাকায় আলো বাতাস কেনা যায়। প্রিয়জনের সঙ্গ কিনলে কিভাবে?
এই বাসায় আমার মেয়ের জন্ম। আমার তখন বউ মাস্টার্সে পড়ে। সপ্তাহে চারদিন ক্লাসে যায়। রবি সোম আর বুধ বৃহস্পতি।
মেয়ে?
ওকে নানুর বাসায় রেখে যেত। প্রথম দিকে প্রতিদিন ক্লাসে যাবার আগে দিয়ে আসতো, সন্ধ্যার পরে আমি ওদের নিয়ে ফিরতাম। রিকশা ভাড়া যেত ত্রিশ ত্রিশ ষাট। ওদের খুব কষ্ট হত, তাই আমিই বললাম, প্রতিদিন না ফিরতে।
শুক্র, শনি আর মঙ্গলবার বাসায় থাকতো?
জ্বী। রবি আর বুধবার সকালে মেয়েকে নিয়ে আমার বউ তার মা’র বাসায় যেত, সোম আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফিরতো।
খাওয়া দাওয়া?
ও রান্না করে ফ্রিজে রেখে যেত। আমি গরম করে খেতাম। সকালে বুয়া আসতো।
তারপর বউ-বাচ্চার সান্নিধ্য পাবার জন্য তুমি বাসা পালটে শ্বশুরবাড়ির কাছে বাসা নিলা?
জ্বী ভাই। সকালের ঠান্ডায় আমার মেয়েটা আসুস্থ্য হয়ে গেল। আমি বারো হাজার টাকায় নতুন বাসা নিলাম। টাকা দিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গ কিনলাম।
সুখ-স্বস্তি কিভাবে কিনলা?
এখনো কিনি নাই ভাই। কিনবো। আমার মেয়েটা একটু বড় হয়েছে। এখন সে খেলার সাথী চায়, ঘরে-সিঁড়িতে-রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করে, চিৎকার করে, এটা বাড়িওয়ালার পছন্দ হয় না, সে নানা উছিলায় কথা শোনায়। মেয়েটা খেলার সঙ্গী চায়। উপরের তলায় তার বয়সী একজন আছে। দুই বাসা মিলে তারা খেলে কিন্তু উপরের তলার লোকজন আমার মেয়ের সাথে খেলতে দিতে চায় না। আমার মেয়ে ওই বাসায় গেলে দরজা খুলে না, তাদের বাচ্চাকেও আসতে দিতে চায় না, মারধোর করে।
কেন?
জানি না ভাই। আমি ভাই ঢাকায় বড় হই নাই। আমি ছোটবেলায় বড় মাঠে খেলেছি, সমবয়সী অনেক বন্ধু ছিল। এদের সাথে খেলেছি, ঝগড়া-মারামারিও করেছি। আমার মেয়েকে মাঠে খেলতে দিবো, সেখানেও টাকা দরকার, সেই সামর্থ্য আমার এখনো হয় নাই। কিছু সঙ্গীসাথী হয়তো দিতে পারবো যাদের সাথে খেললে-মিশলে সে ভালো থাকবে, যাদের বাবা-মা খুশিমনে খেলতে দিবে। এজন্য আমার বাজেট দেড় হাজার টাকা। এখন সাড়ে বারো হাজার টাকা ভাড়া দেই। চৌদ্দ হাজারের মধ্যে এমন কোন বাসার খোঁজ দিতে পারবেন ভাই?

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *