আবুল মনসুর আহমেদ-এর বই: ফুড কনফারেন্স

শুধু একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এতগুলো গল্প লিখে একটা বই প্রকাশ করা সম্ভব, ফুড কনফারেন্স পড়ার আগে তা কিছুটা অচিন্তনীয়ঈ ছিল। আবুল মনসুর আহমদ এর ফূড কনফারেন্স পড়ার পর নিজের দৈন্যতা নতুন করে উপলব্ধি হল। আরও উপলব্ধি হল, তৃপ্তি যতই হোক না কেন, এতদিনে বাংলা সাহিত্যের রস খুব সামান্যই আস্বাদন করতে পেরেছি।

আবুল মনসুর আহমদ বিখ্যাত লেখক, কিন্তু তার সাথে আমার পরিচয়ের সুযোগ হয়নি এতদিনেও। তার রচনা ফুড কনফারেন্স এর নাম শোনা হলেও হাতের নাগালে বইটি পাওয়ার সুযোগ হয় নি কখনো, তাই পড়াও হয় নি। সম্প্রতি পেয়ে গেলাম পিডিএফ ভার্সন। পড়তে গিয়ে জানা গেল, ফুড কনফারেন্স রচনার আগে তিনি ‘আয়না’ রচনা করেছেন এবং বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন। এ কথা অবশ্য লেখক নিজমুখে বলেন নি। বইয়ের ওপেনিং স্পিচ দিয়েছেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন, তিনিই জানিয়েছেন এ তথ্য। এক পৃষ্ঠায় লেখা তার বক্তব্য লেখকের গল্পগুলোর চেয়ে মোটেও কম রসাত্মক নয়, কারো কারো কাছে অধিকতর সুস্বাদু মনে হতে পারে।

১৩৩২ থেকে ১৩৫৪ বংগাব্দ – এই সময়ের মধ্যে গল্পগুলো লেখা হলেও বেশিরভাগ গল্পেরর রচনাকাল ১৩৫০ থেকে ১৩৫৪ সাল। সব গল্পের পটভূমি একই – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলা ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষ। সবগুলো গল্পই ব্যাঙ্গাত্মক – দুর্ভিক্ষ নিয়ে সমাজের ভদ্রসমাজ বলে পরিচিতদের নিচু মানসিকতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি বেশ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে গল্পগুলোয়। ব্যাঙ্গের পাশাপাশি রসও আছে, ফলে পড়াটা উপভোগ্য।

মোট নয়টি গল্প আছে বইয়ে, যথাক্রমে ফুড কনফারেন্স,  সায়েন্টিফিক বিযিনেস, রিলিফ ওয়ার্ক এবং জনসেবা য়ুনিভার্সিটি। এর মধ্যে রিলিফ ওয়ার্ক গল্পটা কোন এক সময় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে সময় পড়া হয়েছিল। তবে এবার বাকি সব গল্পের সাথে পড়ার সময় বুঝতে পারলাম, সে সময় গল্পের মূল স্বাদটাই ধরতে পারিনি।

অসৎ মানসিকতার লোকদের কুযুক্তির প্রয়োগ প্রত্যেকটা গল্পেই দুর্দান্তভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। তার বিপরীতে আছে সাধারন জনগণের অসহায় নিরবতা। লেখক মনসুর আহমদ অভিজ্ঞ রাজনীতিক ছিলেন, তার লেখা আরেকটি বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’, এছাড়াও রাজনীতি নিয়ে তার কিছু বই আছে। বইয়ের গল্পগুলোর সাথে কোন না কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ঘটনার সম্পৃক্ততা আছে সেটা গল্পগুলোর চরিত্র, ঘটনাপ্রবাহ ইত্যাদি থেকে বোঝা যায় কিন্তু সেই সময়কার রাজনীতি এই সময়ে বুঝতে হলে কিছু রেফারেন্সও দরকার। সেরকম কিছু বইতে নেই, ইন্টারনেটেও চোখে পড়ল না। শুধু এই একটি কারণেই, ওই সময়কার ঘটনাবলী সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে গল্পগুলোকে অহেতুক হাস্যরস জ্ঞান করতে পারে কিছু পাঠক, তার একটা নজির গুডরিডসের কমেন্ট সেকসনে পেয়েছি।

সচেতন পাঠকের জন্য ফুড কনফারেন্স রেকমেন্ড করে গেলাম, আর নিজের জন্য লেখকের বই ‘আয়না’।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *