সম্পর্ক ভালো রাখার উপায়

খাওয়াইলে সম্পর্ক ভালো থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই থিওরিতে বিশ্বাসী। এ কারণে আমি অন্যদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার নিয়তে তাদের থেকে খাই।

আমিনের সাথে আমার বয়সের পার্থক্য ছয় সাত বছর হবে। ফেসবুকের কল্যাণে জানা গেল তার জন্মদিন। ছোটভাইয়ের জন্মদিন, HBD লিখে দায়িত্ব শেষ করা উচিত না। তাই সকালেই ফোন দিলাম। ‘কি আমিন, (জন্ম) শেষ হয়া গেল, আর তুমি খাওয়াইলা না। সন্ধ্যায় আমি ফ্রি আছি, স্টারে চৈলা আইসো।’ আমিন আমতা আমতা করে কি জানি বলতে চেয়েছিল, ঠিক বোঝা গেল না, কিন্তু সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে তার না এসে উপায়ও থাকলো না। আমিনের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকা উচিত এরকম মানুষের সংখ্যা আরও চার পাঁচজন – সুতরাং তারাও উপস্থিত থাকল। দেড় বছর ধরে আমিন আমার ধারে কাছে আসে না – তার সাথে আমারসহ সকলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে 🙁

সম্পর্ক ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আমার কলিগরাও জানেন। এ কারণে সুমাইরা লাঞ্চে বসার সময় দরজা বন্ধ করে রাখেন। অবশ্য মাঝে মধ্যে আর্ধেকটা কাবাব কিংবা এক চামচ আচার, অথবা এক পিস মুর্গিভাজা দিয়ে যে সম্পর্ক বজায় রাখেন না তা না। কিন্তু সে দিনগুলোতে তিনি কেন যে বেশ কাঁচুমাচু মুখে ‘নাজমুল ভাই, আজ সব খেতে পারি নাই’ ধরনের কথা বলেন তা বুঝি না!

জাহিদ ভাইয়ের ডেস্ক সবার পেছনে। যেতে হয় আমার পাশ দিয়ে। অফিসের আরেক কলিগের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য তার কাছ থেকে বিস্কুট নিয়ে ফিরছিলেন জাহিদ ভাই, উনার হাতে বিশাল আকৃতির ডায়াবেটিক বিস্কুট দেখে আমার হাতও অটোমেটিক উঠে গিয়েছিল, কিন্তু জাহিদ ভাই না দেখার ভান করে খেতে খেতে ডেস্কে গিয়ে বসলেন। ইদানিং উনার সাথে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে, তাই আমাকেই উঠতে হল – তার ডেস্কে গিয়ে হাত পাতলে এক চতুর্থাংশ বিস্কুট পাওয়া গেল – সম্পর্কেরও কিঞ্চিত উন্নতি হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে জাহিদ ভাই আবারও সেই কলিগের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আরেকটা বিস্কুট নিয়ে আসলেন, আমিও পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক চতুর্থাংশ চেয়ে নিয়ে সম্পর্কের উন্নতি করলাম।

লাঞ্চের সময়ে রেস্টরুমে গিয়েছিলাম। ফিরে দেখি, ডেস্কে একটা চিকেন রোলের এক চতুর্থাংশ রাখা। ভালোবেসে কেউ রেখে গিয়েছে, দেরী করলে ভালোবাসার অপমান, তাই চটপট খেয়ে নিলাম। লাঞ্চের পর সবাই যখন ফিরল, তখন উচুস্বরে ধন্যবাদ জানালাম – ভালোবেসে যিনি চিকেন রোল খাইয়েছেন তিনি বেঁচে থাকুন, আরেকটি বিবাহ করার সুযোগ পান।

বাগরা দিল অফিস বেয়ারা নাসির। ‘ওইটা আপনারে দেয়া হয় নাই, আপনি খেয়ে ফেলছেন!’
‘মানে?’
‘মানে ওইটা জাকারিয়া স্যার খাবেন না বলে প্লেটে রেখে দিছিলেন। জাহেরুল প্লেট নেয়ার সময় আরেক স্যার ডাকছে, তাই আপনার টেবিলে প্লেট রেখে ওইদিকে গেছিল। ফিরে এসে দেখে আপনি খেয়ে ফেলছেন!’

জাকারিয়া স্যারের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নটা পেট সহ্য করতে পারে নি – বোধহয় পেট আমার সেই থিওরিতে বিশ্বাসী নয়!

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *