অ্যাকুরিয়ামের টাইগার শার্ক

আমাদের বাসায় প্রথম একুরিয়াম আসে ইমরানের হাত ধরে, চৌদ্দ পনেরো বছর আগে। আমার কোন এক জন্মদিনে দুপুর কি সন্ধ্যাবেলা ইমরান হাজির হয় ছোট্ট একটি জার হাতে, তাতে আমাদের দেশী কাচঁকি মাছ আকৃতির দুটি গাপ্পি টুকটুক করে সাতঁরে বেড়াচ্ছে। ইমরান তার সবগুলো ঝকঝকে দাঁত বের করে ছটফট করতে করতে বললো – শুভ জন্মদিন দোস্।

এর কিছুদিন পরেই আমার মেজ ভাই একটা একুরিয়াম বানানোর উদ্যোগ নিলো। বাসায় কিছু কাচ ছিল, বাজার থেকে শক্ত আঠা কিনে এনে খেটে খুটে একটা একুরিয়াম দাড় করিয়ে ফেলল। পানি লিক করে কিনা সেই টেস্টও করা হল। তারপর কিনে আনা হল দুটো দেশী টেংরা মাছের মত দেখতে ও আকৃতির টাইগার শার্ক এবং দুটো ছোট লাল মাছ, নাম প্লাটি।

এমনিতে আমার ঘুম খুব গাঢ়, কিন্তু নতুন একুরিয়ামের উত্তেজনায় হয়তো সেদিন পাতলা ছিল, মাঝরাত্তিরে পানি পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ধরমর করে উঠে দেখি একুরিয়ামের পানি বের হয়ে যাচ্ছে তীব্র গতিতে, তিন চার মিনিট দেরি করলে মাছ ডাঙ্গায় পরে থাকবে। তাড়াহুড়ো করে বালতিতে মাছ ধরা হল এবং পরের দিন মেজ ভাই নতুন একটা একুরিয়াম নিয়ে আসলো, মাছগুলোর থাকার জন্য একটা বাসা তো দরকার।

এভাবেই আমাদের বাসায় একুরিয়াম চলে এলো। এর আগে আমার ধারনা ছিল একুরিয়াম শুধু বড়লোকদের বাসায় থাকে, নিদেনপক্ষে উচ্চ মধ্যবিত্ত। কিন্তু মাত্র পাচঁশ টাকায় একটা মাছসহ একুরিয়াম কেনা সম্ভব সেটা কেনার আগে জানা ছিল না।

অল্প কয়েকদিনের মাঝে বাসায় দুটো জার আর দুটো একুরিয়াম হয়ে গেল। অনেক মাছ এসে মরে গেল কিন্তু সেই প্রথম কেনা টাইগার শার্কদুটো থেকে গেল। বড় হতে হতে সেগুলো একেকটার সাইজ ফুটখানেক হয়ে গেল, একুরিয়ামে ছোটাছুটি করলে ভয় হয় ভেঙ্গে যাবে নাতো! অনেকবার চিন্তা হয়েছে শার্ক দুটোকে বড় কোন পুকুর বা নদীতে ছেড়ে দেয়া হবে।

হবে হবে করেও শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া হয় নি। আর ছাড়াও হবে না। গত বৃহস্পতিবার দুটো শার্কই মরে গেছে। প্রায় পনেরো বছর কাটিয়ে গেলো আমাদের পরিবারে।

ছবি: সেলবাজার

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

One Comment on “অ্যাকুরিয়ামের টাইগার শার্ক”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *