সিলেটের সহযোদ্ধা সুমন

“নিজের একজন ভাইয়ের ওপর হামলার কথা শুনে আমি, সুমনসহ ১০-১৫ জন তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। গিয়ে সেখানে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা হানাদারা বাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি চালায়। বৃষ্টির ঘনত্ব একটু কম ছিল, তাই ওদের একটি গুলি আমার সামনে থাকা সুমনের গায়ে লাগে। সে তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে আনতে গিয়ে একটি গুলি আমার পেটে আঘাত করে। আরও কয়েকজন বন্ধু গুলিবিদ্ধ হয়। সুমনকে হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় সে। আমি সহ আরও কয়েকজন বন্ধু এবং আমাদের নেতা অঞ্জনও গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও হাসপাতালের বেডে শুয়ে শহীদ সুমনের সহযাত্রী হওয়ার প্রহর গুনতে থাকলাম। সুমন শহীদ হয়ে গিয়েছে। এই বাংলার মাটি সুমনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সুমনের সেই রক্ত কখনোই বৃথা হবে না। প্রয়োজনে সুমনের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরাও জীবন দেবো। সুমন যেন আমাদেরই ডাকছে। বলছে, বাড়ি থেকে মায়ের হাতের নাড়ু এনেছি। আমি কি একা খাবো, তোরা খাবি না? সুমনের ডাকে সারা দিয়ে আমাদের ইচ্ছে করে সকল বন্ধন ছিন্ন করে ছুটে বেরিয়ে যাই – আমার রুমে চৌকির নিচে টেপ দিয়ে বেঁধে রাখা জং ধরা পিস্তলটা এক টানে বের করে নেই, অঞ্জন ভাইয়ের রুম থেকে মুঠোয় মুঠোয় পকেট ভর্তি করে বুলেট নিয়ে ছুটে যাই – তারপর ঢিসা ঢিসা – ঢ্যা ঢ্যা ঢ্যা গুলি করে শেষ করে দেই কিন্তু হায় সেই তীব্র আকাঙ্খার অপমৃত্যু ঘটে হানাদারা বাহিনির পেটোয়ারা বাহিনীর কারণে। হাসপাতালের বেডের সাথে হাতকড়া বেঁধে রেখেও তারা নিশ্চিন্ত নয়, দরজার পাশে দুজন লাইসেন্সড বন্দুকধারী পুলিশ দাড়িয়ে।”

বই: সিলেটের সহযোদ্ধা সুমন
লেখক: হুসাইন আহমদ সাগর
প্রকাশক: মানবজমিন
সম্পাদনা: নাজমুল হাসান দারাশিকো

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *