গল্প: মধ্যরাতের পরে

 
গল্প: মধ্যরাতের পরে। প্রতিকী ছবি।
গল্প: মধ্যরাতের পরে। প্রতিকী ছবি।

রাত ৩.৩৫। মোবাইলের ভাইব্রেশনে ধ্রুবর ঘুম ভাঙল। চোখ না খুলেই অ্যালার্ম বন্ধ করে দিল সে। তারপর ডানদিকে হাত বাড়িয়ে দিল। ফাঁকা। রূপা নেই!

চোখ খুলে মোবাইল সময় দেখল ধ্রুব। তিনটে বিশে অ্যালার্ম বাজার কথা। সময়মত বন্ধ না করলে একটু পর পর বাজতে থাকবে অ্যালার্ম। ঘুমের ঘোরে ভাইব্রেশন মোডে রাখা অ্যালার্ম শুনতে পায় নি, দেরী হয়ে গেছে পনেরো মিনিট। রূপা ফেরেনি বিছানায়, সুতরাং ধ্রুব উঠল।

অন্যান্য গল্পের লিংক এখানে

ছোট্ট দুই রুমের এই ফ্ল্যাটে তাদের দুজনের সংসারের বয়স সতেরো দিন। এ মাসেরই চোদ্দ তারিখ শুক্রবারে পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে। বিয়ের আগেই বাসা নেয়া হয়েছিল। সুতরাং বিয়ের তিনদিনের মাথায়ই রূপাকে নিয়ে নতুন বাসায় সংসার শুরু। দশদিন বাদেই রূপার বিসিএস রিটেন পরীক্ষা, তাই দেরী করার উপায় ছিল না। পরীক্ষার পরেই বিয়ে হোক – এমনটি ধ্রুবরা চেয়েছিল, কিন্তু রূপাদের আগ্রহে বিয়ে হয়ে গেল। তেরো তারিখ সকালে বাড়ি পৌছে চৌদ্দ তারিখে বিয়ে, পনেরোতে বৌভাত, ষোল রাতে রওয়ানা করে সতেরোতে নিজেদের সংসার। সংসার বলতে ডাবল খাটের এক কোনায় জড়াজড়ি করে থাকা আর পরস্পরের খোঁজখবর নেয়া-ভালোবাসা ইত্যাদি। পরীক্ষা বলে রূপাকে রান্নাবান্নার ঝামেলায় জড়াতে দেয় নি ধ্রুবর ছোট খালা, দুটো গলি পরেই থাকেন তিনি। নিজে এসে বা বড় মেয়েকে দিয়ে একদিনের খাবার রান্না করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন শুরু থেকেই, গরম করে খাওয়ার কাজটা রূপা-ধ্রুব মিলে মিশে করে নিচ্ছে।

পাশের রুমে ঢুকল ধ্রুব। যা ভেবেছিল তাই। বাতি জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে এবং খোলা বইয়ের উপর বাম হাতের মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে রূপা। খোলা চুল বাতাসে উড়ে গাল-মুখ ঢেকে রেখেছে। রূপার পড়ার টেবিল আর ধ্রুবর কম্পিউটার টেবিল একটাই। কম্পিউটারের খোলা স্ক্রিনে ডায়লগ বক্স বলছে ধ্রুবর কমান্ড দেয়া সিনেমা ডাউনলোড কম্প্লিট। হাতের উপর দুটো মশা রক্ত খেয়ে ফুলে আছে, কপালে আরেকটা। হাত এবং মাথার টানে খোলা বইয়ের পাতা ছিড়ে যাচ্ছে প্রায় কিন্তু রূপা ঘুমাচ্ছে!

রাত তিনটে পর্যন্ত পড়ে তারপর ঘুমুতে যাবে – এই শর্তে সাড়ে বারোটার দিকে ধ্রুব শুয়ে পড়েছিল। এখন বাজছে প্রায় পৌনে চারটা, তারমানে রূপা আজও তিনটেয় পড়া শেষ করে নি। অবশ্য গত ক’দিনে একদিন মাত্র সময়মত শুয়েছে সে, পরদিন পরীক্ষা ছিল না বলে। ছটায় আবার অ্যালার্ম বাজবে, কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে পারবে না সেই অ্যালার্মে। তাই ধ্রুব মোবাইলেও অ্যালার্ম সেট করা ছ’টায়। সেই ডেকে তোলে রূপাকে – রাতে রূপার ঘুম সব মিলিয়ে মাত্র তিন ঘন্টা।

কম্পিউটারটা বন্ধ করে দিল ধ্রুব। মাথার নিচ থেকে বইটা টেনে বের করে বন্ধ করল সেটাও। ‘চলো, বিছানায় ঘুমাবে’ – আস্তে করে রূপাকে বলল সে। উত্তরের অপেক্ষা না করে পাঁজাকোলে তুলে নিল রূপাকে, টের পেয়ে আধা-জাগ্রত রূপা ধ্রুবর গলা জড়িয়ে ধরল। রূপার হালকা শরীরটাকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল ধ্রুব।

তারপর ফিরে এল আবার। লাইট-ফ্যান বন্ধ করে দিল। রূপার মোবাইলে স্ক্রিন লক খুলে অ্যালার্মটা বন্ধ করে দিল। তারপর নিজের মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করল – সাড়ে ছ’টা!  আধাঘন্টা বেশী ঘুমাক!

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *