ফাহমিদাকে আমার চিঠি

‘লেখক-হবো’ বাতিকের এক বড় সমস্যা হল নিয়মিতভাবে কিছু না কিছু লিখতে হয়। লিখতে না পারার যে সমস্যা তার নাম ‘রাইটার্স ব্লক’ – প্রায় সকলেই জানে কিন্তু লিখতে না পারার যে যন্ত্রনা সে সকলে জানে না। গেল বছরে নানা ব্যস্ততার কারণে লিখালিখি কমেছে, কিন্তু আগ্রহ থাকার পরও লিখতে না পারার ঘটনা পুরো বছরে দুবার – বছরের শুরুর দিকে প্রায় মাস খানেক এবং শেষের দিকে এসে প্রায় মাসখানেক। ফেসবুক স্ট্যাটাস নয়, একটা দুটো ব্লগ নয়, ডায়রী-তো নয়ই – জিরো জিরো জিরো। শেষে সেই আদিম পন্থায় ফিরতে হল – চিঠি। এ যুগে কে চিঠি লিখে আর কেই বা চিঠি পাওয়ার আশা করে?

চারদিকের জীবনের সমুদ্র সফেনে ক্লান্ত জীবনানন্দকে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। গেল বছরে আমাকে দু’চারটে চিঠি লিখার সুযোগ করে দিয়ে শান্তি দিয়েছিল ফাহমিদা।

ফাহমিদা আর আমার চিঠি

ফাহমিদাকে আমার চিঠি

চিঠির প্রেক্ষাপট

চিঠি নিয়ে আলাদা কোন প্রেক্ষাপট নেই। ফাহমিদা খুব ভালো মেয়ে এবং বন্ধু। ফেসবুক চ্যাটিং-এ কথা হতো আমাদের। কোন একদিন ফাহমিদা আমাকে চিঠির আকারে মেসেজ দিয়েছিল, আর এভাবেই শুরু। এবং, কয়েকটি চিঠি আদান-প্রদানের পরে হঠাতই চিঠি বন্ধ হয়ে আবার চ্যাটিং এর আলোচনায় ফিরে যাই আমরা। সেই সময়টায় আমি বেশ অস্থির ছিলাম, চিঠিগুলো আমাকে এক ধরণের স্বস্তি দিয়েছিল। এজন্য ফাহমিদাকে ধন্যবাদ। ফাহমিদার অনুমতি নিয়েই চিঠিগুলো তুলে রাখলাম।

10/28/13, 10:53 PM
নাজমুল ভাই, 

পত্রের প্রথমেই সালাম নেবেন। কেমন আছেন আপনি? আমি পরম করুণাময়ের দয়ায় ভালো আছি।

আপনি কি আমার উপর রাগ? এতোদিন হয়ে গেলো কোন খোঁজ খবর নেন নি! কিন্তু রেগুলার স্টেটাস দিচ্ছেন ঠিক। 

যা হোক নিজ দায়িত্বে আমার খোঁজ নিতে আপনাকে বলা গেলো। এখন আর লিখছি না। 

ফাহমিদা।
10/28/13, 11:34 PM

প্রিয় ফাহমিদা,
ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। 

শারীরিকভাবে সুস্থ্য আছি, কিন্তু মানসিক দিক থেকে সুস্থ্য নেই। অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গত প্রায় পনেরোটা দিন। অস্থিরতার কারণ আপনাকে বলতে পারছি না, দুঃখিত। তবে দোয়া চাইতেও ভুলছি না - স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা আমার জন্য খুবই দরকার।

আপনার উপর আমার রাগ নেই। সম্ভবত এখন পর্যন্ত একবারও রাগ করিনি, কষ্টও পাই নি। আপনি অন্তত: দুইবার পেয়েছেন, আমি জমিয়ে রেখেছি। সময়মত রাগ করে/কষ্ট পেয়ে প্রতিশোধ নেবো। এতদিন হয়ে গেল খোঁজখবর নেই নি - অভিযোগ সত্যি, মেনে নিচ্ছি। ইচ্ছে করেই নেই নি। কদিন আগেই খেয়াল করেছিলাম - আমি বেশীরভাগ সময়ই আপনাকে নক করে কথা বলি (আপনাকে বলেওছিলাম), আপনার চিঠির আগের চিঠিতে (গত বুধবার) নতুন করে খেয়াল করলাম। আপনি যদি নক না করে, কথা না বলে থাকতে পারেন, তবে আমি কেন পারবো না/পারছি না? - এই প্রশ্ন বেশ ভালোভাবেই মাথায় চড়ে বসল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম - আপনি নক না করলে আমি আর নক করছি না - আপনি পারেন, আমিও পারবো। ছেলেমানুষী সিদ্ধান্ত - আপনি-আমিতে তো আর ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক না যে লেন এবং দেন হবে, দুজনকেই লাভবান হতে হবে - কিন্তু তা সত্বেও সিদ্ধান্তে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আপনি আজ চিঠি না পাঠালে আর কোনদিনই হয়তো আপনাকে লিখতাম না। ভুলে যেতাম, তা কিন্তু না। হঠাৎ কোনদিন রাত আড়াইটেয় মুহুর্মুহ ফোন দিয়ে আপনাকে ঘুম থেকে তুলে আপনার সাথে পাঁচমিনিট কথা বলতাম, আপনার সাথে কথা বলার শখ পূরণ করে আমি ঘুমাতাম, আর কাঁচা ঘুম থেকে উঠার কারণে আপনি জেগে থাকতেন ঘন্টাদেড়েক। শয়তান যখন আমার ভেতরেই আছে - এই কাজ কোনদিন করবো না, সেই গ্যারান্টি দিতে পারছি না।

ইনফ্যাক্ট - আরও কিছু সিদ্ধান্তও একই সাথে নেয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডেস্কটপের ডানদিকে টিকার অফ করে দেয়া হয়েছে, চ্যাটিং বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, আগে পুরো সময়টাই ফেসবুকে লগিন থাকতাম, এখন কিছুক্ষন পর পর আসি, একটু থেকে চলে যাই। চেষ্টা করছি ফেসবুক থেকে দূরে সরার জন্য - যতটুকু না থাকলেই নয়। দেখা যাক পারা যায় কিনা। 

কেমন আছেন ফাহমিদা? এ কদিন ভালো ছিলেন? শুভ চলে গেছে? প্রজ্ঞাপুকে কি হরতালেও অফিস করতে হচ্ছে? নাকি হরতাল পর্যন্ত আপনাদের সাথেই আছেন? হাসান ভাইয়ের কি অবস্থা? রকিব ভাইয়ের স্ট্যাটাস পড়ে কি হাসান ভাই বুঝতে পারবেন - রকিব ভাইয়ের ভেতরে তিনি নিজেই লুকিয়ে আছেন? পারা উচিত - আমি হলে পারতাম। 

এই তো। ছোট্টো চিঠির বড় উত্তর দিলাম। 

ভালো থাকুন ফাহমিদা, অনেক ভালো। সালাম। 

দারাশিকো
10/29/13, 12:10 AM

প্রিয় দারাশিকো ভাই! 

আপনি কি ভেবেছেন আপনি আমাকে লম্বা লিখবেন আর আমি ছোট্ট চিঠি দেবো!না তা তো হয় না! 

আপনার অস্থির অবস্থাটা কিছুটা আঁচ করে ফেলেছি।কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে এমনিতেই ভালো আছেন জেনে কিছুটা চিন্তামুক্ত হলাম। 

আপনি হিসেব করছেন আপনি আমাকে অনেক নক করেন। কিন্তু হিসেব করেন নি আমি কতো বার নক করি আপনাকে যেখানে আমি কাউকে নক করিনা।আপনাকে অফ লাইনে পাওয়াটা নক না করার অরেকটা কারন। বলতে গেলে আমি প্রায়ই গায়ে পড়ে নক করি। 

এবার আসা যাক ফোন করার ব্যাপারে।আমি তো ঘুমাবার আগে ফোন সাইলেন্ট মুডে দিয়ে রাখি। এখন থেকে নরমাল মুড করে রাখবো।আপনার এতে সুবিধা হবে। 

আপনি লিখেছেন আপনি আমার সাথে কথা না বলে থাকার চেষ্টা করছেন।বাব্বাহ!আপনার ভালোবাসা দেখলে কিন্তু কান্না চলে আসে। 

আমি ভালো আছি।দুদিন সামান্য জ্বর ছিলো। এখানে কিছুটা শীত পড়েছে। বড়াপু অফিস করছে হরতালে। শুভ চলে গেছে। আছে আল্লাহর রহমতে ভালো। পিউও চলে গেছে। তবে ক্লাস হচ্ছে না। গল্পের 'রকিব ভাই' আসলে 'অমিত দা'। আর কাহিনীটা এক হারিয়ে যাওয়া বান্ধবীর। হাসান ভাইয়ের খবর জানিনা।ধারণা করছি ভালো আছেন। 

আপনি বলেছিলেন হাসান ভাইকে মন থেকে ভুলতে চেষ্টা করতে তাই করছি। সুতরাং উনার কথা টেনে এনে চিঠিতে দু লাইন বেশি লিখলাম। তাতে কার ক্ষতি বা লাভ হলো বুঝতে পারছি না। 

চিঠি এখানেই শেষ করছি। পরে ইতিহাস লেখার কারনে খোঁচা দেবেন। 

ভালো থাকবেন। 

ফাহমিদা।
10/29/13, 12:51 AM

প্রিয় ফাহমিদা, 

লিখতে ভালো লাগছে। বহুদিন হয়ে গেল মনের মত করে ব্লগ লিখতে পারছি না, বহুদিন! আর কে নারায়নের গল্প আন্ডার দ্য বেনিয়ান ট্রি-র চরিত্র নামবি-র কথা জানা আছে? ভয় হয়, আমার বোধহয় লেখার ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছেন রাব্বুল আলামীন। এইজন্য স্ট্যাটাস লিখছি। চিঠির উত্তরও লিখছি। যাই লিখি - লিখছি তো! ভরসা পাই, মনে হয়, না - এখনো বোধহয় ক্ষমতা নেন নি! 

অস্থির বিষয় আঁচ করতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগছে। তবে আশংকাও হচ্ছে - আমার গানের স্ট্যাটাসগুলো দেখে অন্যদের মত আপনিও ভুল বিষয় আঁচ করলেন কিনা! ভুল কইরেন না। 

আপনি কাকে নক করেন কাকে করেন না সেটা কি আমার জানার কথা ফাহমিদা? আমি আমার দিকটা ভেবেছি - সেই মোতাবেক সিদ্ধান্তও নিয়েছি। গায়ে পড়ে নক করার কাজ আমরা দুজনেই করেছি। আরও করবো কিনা, না করলে কি হয় সেটাই এক্সপেরিমেন্ট করা হল। 

আমি শুধু আপনার সাথেই না, যেহেতু চ্যাটিং বারই বন্ধ করে দিয়েছি - সেহেতু সবার সাথেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। কাউকে মেসেজ দিতে প্রয়োজন হলে অনলাইনে যাই, বা চ্যাটবার অন করে খুজে বার করে নেই। টিকারও বন্ধ করেছি যেন কে আছে অনলাইনে সেটা দেখতে না হয়। এখানে ভালোবাসা কই? যা আছে নিরেট বাস্তববাদিতা। কান্না আসা অর্থহীন। 

মোবাইল ফোন নরমাল মুডে রাখার দরকার নাই - সাইলেন্টেই থাকুক। যেদিন শয়তান জাগবে সেদিন আপনার ফোনও কোন কারণে নরমাল মুডেই থাকবে, এবং হয়তো সেদিন একটা ভালো ঘুম আপনার ঘুম দরকারও হবে। দেখা যাক  

হাসান ভাইকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা সফল হোক। তবে হাসান ভাইকে ভুলতে গিয়ে নতুন গর্তে পা দেয়ার আগে সতর্ক হওয়া ভালো। 

হাসান ভাইকে ভোলার চেষ্টা করার জ্বালা কি সেটা তো নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন - এই জ্বালার অভিজ্ঞতা দ্বিতীয়বার না হোক - শুভকামনা। 

সালাম ফাহমিদা। ভালো থাকুন সবসময়। 

দারাশিকো
11/2/13, 11:15 PM

প্রিয় ফাহমিদা, 

আসসালাম! 

(মিউ লিখি নাই কিন্তু! হাত ফস্কায়া মিউ বের হওয়ার সুযোগ কম, মুখ ফস্কায়া বের হয়ে গেলেই যন্ত্রনা!) মুখ ফস্কে দুইবারই মিউ বের হয়ে গেল আর আপনিও রাগ করে ফেললেন। উহু, ভুল হচ্ছে। প্রথমবার রাগ করে ফেললেন বলে দ্বিতীয়বার ভুল শুনে ফেললেন - মিউ না শুনে শুনলেন ম্যাঁও! ভুলই যদি শুনবেন, ফাহমিদা শুনতে পারলেন না? 

রাগ মনে রাইখেন না। ভালো হয়ে যাচ্ছি, বিশ্বাস করেন। অবশ্য ভালো হয়ে গেলাম কিনা সেটা তো আপনি আর জানবেন না - ফোন করার উপর ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছেন। ভালো হওয়ার প্রচেষ্টার প্রথম ধাপে মোবাইলে নাম পাল্টায়া FhmidaNew সেভ করলাম। ফাহমিদা বানানে ভুল লিখি নাই, ইচ্ছা করেই 'এ' বাদ দিয়েছি, জায়গার সংকট। 

এই পত্র লেখার উদ্দেশ্য দিকবিদিক ছোটাছুটি করতেছে - লাগাম টানা আবশ্যক। এই পত্রের উদ্দেশ্য হল - স্যরি। স্যরি, স্যরি, স্যরি। এস ও ডাবল আর ওয়াই। দন্ত-স য-ফলা র হ্রস্ব ই-কার। মুখ ফস্কায়া আরেকবার যেন মিউ/ম্যাঁও বের না হয়, সেই চেষ্টা বলবৎ থাকবে। 

দরখাস্ত কবুল করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। ধন্যবাদ। মাআসসালাম। 

দারাশিকো 

(কিছু লিখতে ইচ্ছা করতেছিল। স্ট্যাটাস যখন লিখতে পারতেছি না, তখন একটা চিঠিই নাহয় লিখি। আর চিঠি লেখার প্রাপক তো একজনই আছে - ফাহমিদা।)
11/3/13, 11:40 AM

প্রিয় দারাশিকো! 

স্যরি অ্যাপ্লিকেশন গ্রেন্টেড হলো! 

আপনি কাল 'মিউ ম্যাঁও' বলেছেন। এটা আমার কাছে নতুন না। ছোটবেলায় এবং কলেজে আমাকে অনেকেই মিউ বলতো! এমনকি হাসান ভাই সবসময়ই মিউ মিউ করতো। আমি আপনাকে হাসানোর জন্য এমন করেছি। আর 'ফোন করবেন না' এটা অভিমানের কথা।

সুতরাং নিশ্চিন্ত থাকুন।

আপনার চিঠি পড়েছি সকালে। রাতে ক্যান পড়লাম না এ নিয়ে পস্তাচ্ছি। রাতে পড়লে মনটা মূহূর্তেই ভালো হতো। রাতে খুব মন খারাপ ছিল একটা বিষয় নিয়ে। সে যা হোক অনেক ধন্যবাদ নিজে ইচ্ছে করে চিঠি লেখার জন্য।

অতীতে আমি প্রথমে লেখার পর আপনি উত্তর করতেন। অতীতের চিঠি গুলোতে কমপক্ষে একটা হলেও খোঁচামূলক বাক্য থাকত। এই চিঠিতে তা নেই। সম্ভবত ভালো হয়ে যাবার ব্যাপারটা সত্যি।

পরবর্তীতে বোঝা যাবে চেষ্টা অব্যাহত আছে কি না!

ইয়েপ আমি কথা বেশি বলছি। এখন আপনি লিখতে পারেন। ওভার!
11/3/13, 3:09 PM

ফাহমিদা, 

বুদ্ধদেব গুহ'র নাম শুনেছেন? তিনি একজন সাহিত্যিক, পশ্চিম বাংলার। (এর আগে আপনার সাথে যত কথাবার্তা হয়েছে তাতে ধারনা তৈরী হয়েছে যে বই-টই পড়ার তেমন কোন অভ্যাস আপনার মধ্যে নেই, থাকলেও লিমিটেড স্কেলে-তাই বললাম) বুদ্ধদেব গুহর একটা বই আছে, নাম সবিনয় নিবেদন। বইয়ের বিশেষত্ব হল - সম্পূর্ণ বইটিই চিঠি দিযে লেখা। একজন নারী এবং একজন পুরুষ - কোন এক ভ্রমণে দুজনের দেখা হয়েছিল, কেউ একজন তার ব্যাগ ফেলে গিয়েছিলেন, সেটা ফেরতদান প্রক্রিয়ায় যে চিঠির আদান প্রদানের শুরু তার শেষ পরিণতি নিয়েই উপন্যাস। সর্বশেষ চ্যাপ্টারটুকু অবশ্য চিঠি নয়, কারণ সেখানে নারী এবং পুরুষ সাক্ষাত করেছিল এবং তাদের শরীরী বর্ণনাসহ উদ্দাম ভালোবাসার বেশ বড়সড় এক চিত্র এঁকেছিলেন লেখক। চিঠি দিয়ে উপন্যাস লিখে ফেলার আইডিয়াটা আমার কাছে অভিনব লেগেছে। বলতে পারেন - একইভাবে একটা গল্প বা একটা উপন্যাস লেখার আগ্রহ সেই স্কুলজীবন থেকে লালন করছি। 

২০০৮ সালে আমার চেয়ে তিন ব্যাচ জুনিয়র এক মেয়ের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে এই উপন্যাস লেখার কাজ শুরু হয়ে গেল। তার নাম মুনমুন। সে তখন এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি - ফেসবুক চ্যাট-অ্যাডিক্ট। চ্যাটবক্সে নক করেছিলাম, কথা বলতে পারি নি টেকনিক্যাল কারণে - ফলে সে একটা চিঠি লিখে রিপ্লাই দেয়। জবাবে আমিও চিঠি লিখি - এবং, এই আদান প্রদান শুরু হয়ে যায়। 

২০০৮ থেকে ২০১০ - এই সময় পর্যন্ত মুনমুনের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। ২০১০ সালে সে বিয়ে করে এবং আমার সাথে চ্যাটিং/চিঠি আদান প্রদান অনৈতিক হতে পারে এই আশংকায় আমার সম্মতিক্রমেই আমাকে ডিলেট করে দেয় ফ্রেন্ডলিষ্ট থেকে। চিঠিগুলো মুছে দেয়ার রিকোয়েস্ট করেছিল, পরে আমার জিমেইলে মেইল করে খোঁজও নিয়েছিল ডিলেট করেছি কিনা। আমি ডিলেট করি নি। আজ আবার ফেসবুকে সেই থ্রেডটা খুঁজে বের করলাম, ওয়ার্ড ফাইলে কপি পেস্ট করে পিডিএফ বানালাম, সময় করে পড়বো। মুনমুনকেও চিঠি লেখার শুরুর দিকে সবিনয় নিবেদনের কথা বলেছিলাম, এ কারণে চিঠিগুলো এক থ্রেডে রিপ্লাই আর রিপ্লাই হত। আপনাকে পড়াতেও ইচ্ছে করছে, তবে সেটা ঠিক হবে কিনা সেটা বোঝার জন্য আগে নিজে একবার পড়ে নিতে চাই। 

আপনার সাথে শেষ কদিনের কথাবার্তা সেই সময় আর পাগলামির কথা মনে করিয়ে দিল। এ কারণেই চ্যাটিং এর বদলে চিঠির আদলে লিখছি। স্মৃতি রোমন্থনের একটা আলাদা নেশা আছে - দশ বছর পরে এই চিঠিই হয়তো আমাকে নতুন করে রোমাঞ্চিত করবে - কেমন হবে তখন ভাবুন তো! 

এবার আপনার চিঠির প্রসঙ্গে যাই। আগের চিঠিগুলোর কয়েকটা পড়লাম - খোঁচা দিলাম কোথায় খুঁজে পেলাম না। দুটো ব্যাপার হতে পারে। এক, আপনি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং অনুভূতিপ্রবণ। দুই, আমি অত্যন্ত সংবেদনবিরোধী এবং অনুভূতিহীন। দ্বিতীয়টা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী, কারণ প্রায় একই রকম অভিযোগ আমি গত প্রায় দশ বছর ধরে শুনছি। একটু কষ্ট করে ধরিয়ে দিয়েন এখন থেকে, শুধরে নিতে না পারলে বছরের পর বছর ধরে কত শত মানুষের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকবো কে জানে! 

আপনাকে সত্যিই ম্যাঁও বলি নি ফাহমিদা, হয়তো উচ্চারনের কারণে ওরকম শোনা গেছে। ফাহমিদা বলে না ডাকার চেষ্টাও শুরু করবো বলে ভাবছি, চেষ্টা করবো ফাহমিদা বলে ডাকতে, যদি ডাকা হয় আরকি! 

হঠাৎ মন খারাপ হয়েছিল কেন ফাহমিদা-বলবেন? 

আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নেয়ার জন্য। দেশ ও জাতির কল্যাণে এমন ধারাই বাতিল করা উচিত। কল্যাণমুখর হোক দিন এবং রাত। সালাম। 

দারাশিকো 
অফিস ডেস্ক, নিকেতন।
11/5/13, 7:40 PM

প্রিয় দারাশিকো, 

পত্রের প্রথমে আমার সালাম নেবেন। আমার চিঠির অপেক্ষায় থেকে নিশ্চয়ই ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন নি। আসলে বিট্রেটা করছে দুই জিনিস। এক. পড়াশোনা দুই. ব্যালেন্স। যাক সে কথা। 

আমি বই কম পড়ি।কারন বই পড়লে নেশা ধরে যায়। এবং সারাক্ষণ মাথায় কি সব ঘুরতে থাকে। চিঠি দিয়ে একটা বই লেখার ইচ্ছের কথা আপনি লিখেছেন।এমন একটা ইচ্ছে আমারও আছে। তবে করা হয়ে উঠবে কি না জানিনা। আমি অবশ্য অনুপ্রাণিত হয়েছি অন্যভাবে। 

আপনাকে এর আগে আমার চিঠি লিখার স্বভাবের কথা জানিয়েছি।খুব ছোটবেলায় আব্বুকে চিঠি লিখতাম। আমার একটা বান্ধবী ছিলো নাম মারিয়া আশা। ও খুব ভালো চিঠি লিখত। ওকে লিখতে লিখতে চিঠি লিখা স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ছোট খাট কথাও চিঠি আকারে লিখতাম। এরপর এমনও হয়েছে কারো সাথে চ্যাটের ঝামেলা না করে একটা চিঠি দিয়ে দিতাম। আজ অব্দি যতো জনকে চিঠি লিখেছি প্রত্যেকে (ছেলে মেয়ে উভয়) আরো চিঠি পাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। এক ছোটবোন কেঁদে কেঁদে বলেছিল, ‍‍"আপু আমাকে কখনো কেউ চিঠি লিখে নি। তোমার চিঠি পড়ে চোখে পানি এসে গেছে। আমার জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উপহার এটি।" 

তবে একজন কোনদিন বলেনি 'চিঠি দিও', 'চিঠির জবাব কই'? সে হলো হাসান ভাই। তাই প্রতিদিন উনাকে চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে। লিখতে লিখতে একটা খাতা ভরে গেছে। একদিন চিঠির খাতাটা পুড়িয়ে ফেলবো। 

মুনমুনকে চিঠি লেখার ব্যাপারটা জেনে ভেবেছিলাম হয়ত আপনার আর মুনের মধ্যে খুব 'ভাব' ছিলো। আপনার সাথে ফোনে কথা বলার পর ধারনা পাল্টেছে। চিঠি গুলো পড়তে ইচ্ছে হয় কেন যেনো। 

এবার আমার কথা বলি। 

আমি আছি পরম করুণাময়ের দয়ায় ভালোই। সেদিন 'কেমন আছে কমলিনী রাই'-এ গান শুনে কেঁদেছিলাম। এই গান আমাকে সেই দিন গুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যে দিন গুলোতে হাসান ভাইয়ের সাথে খুব কথা হতো। কতো কি না বলে আমাকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করতো! আমিও কত কি বলতাম।আপনি মিউ বললেই উনার মিউ ডাকের কথা মনে পড়ে। 

ছোটবোন বাসায় এসেছে। ওকে আজ মাছ রান্না করে খাওয়ালাম।খপ করে ধরে মাথায় তেল মেখে দিলাম।সে তেল পছন্দ করে না। আবার চুল শেম্পু করেও দিলাম। ওকে পচাঁলাম, "ইশ এত্তো লম্বা চুল আরেকজন লাগবে!ইশ আম্মু কোথায় তুমি।" ও ক্যাট ক্যাট করে হাসল।ওর হাসি দেখলে অনেক কষ্ট কমে যায়। 

আজ আর লিখছিনা। এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। ভালো থাকবেন,খুব ভালো। 

ফাহমিদা। 

পুনশ্চ: কয়টা দিন একটু ব্যস্ত থাকতে হবে। কিছু কাজ হাতে আছে। আপনাকে পরবর্তী চিঠি শুক্রবারের পরে দেবো।
11/8/13, 3:32 PM

মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে যখন আপনি অনেক মানুষের মাঝে থেকেও অনেক একা। 

সে সময় আপনি স্থির বসে থাকবেন হয়তো কোন কার্পেট বিছানো মেঝেতে, অথবা গাছপালা ভর্তি বারান্দার কোন এক কোনে, কিংবা হয়তো বিছানায় শুয়ে সিলিং এর দিকে শূন্য চেয়ে থাকবেন, আপনার আশে পাশে পৃথিবীর শত ব্যস্ততা - ছোট বোনটা তার ইচ্ছেমত কথা বলে যাচ্ছে, প্রশ্ন করে যাচ্ছে, অথবা আপনার হাত নিয়ে খেলছে, কিংবা মোবাইল, অথবা অন্য কিছু অথচ আপনি ঠিক এই দুনিয়াতে নেই। কারণ আপনার মোবাইলে, অথবা ল্যাপটপে, অথবা এ দুজায়গার কোনটিতেই নয়, আপনার মাথায় সেট করা বিশাল স্টেরিও সেটে বেজে যাচ্ছে এমন কোন এক অসাধারণ রোমান্টিক গান, যা আপনি মন দিয়ে না শুনলেও হারিয়ে যাচ্ছেন গানের সুরে। 

বুক ভরা ভালোবাসা 
রেখেছি তোমারই জন্য 
ও প্রিয় আমার, 
আমি যে তোমার 
তুমি শুধু আমারই জন্য। 

সে সময়গুলো অনেক অদ্ভুত, কারণ আপনি তখন পৃথিবীতে থেকেও পৃথিবীর বাইরের কেউ, সম্ভবত স্বর্গে যাত্রী, অথবা অন্য কিছু। ওই সময়টায় আপনার মনে জাগতিক কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না, জীবনের ছোট-বড় টার্গেটগুলো অ্যাচিভ করার তাড়া থাকবে না। হয়তো সে সময় আপনি হাতড়ে হাতড়ে জীবনের অসংখ্য ঘটনার মধ্য থেকে কোন সুখের ঘটনা খুজে বের করবেন, অথবা তৃপ্তিদায়ক কোন মুহুর্ত, তারপর সেগুলো রোমন্থন করবেন, ঠান্ডা কোমল আইসক্রিম মুখের ভেতর নিয়ে গলে যাওয়া পর্যন্ত যে অনুভূতি, অপার্থিব আবেশ - সেটা পাবেন ওই সময়ে। অতীতের কোন ঘটনা বাদ দিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের কোন দৃশ্যকাব্য রচনাও হতে পারে সেই সময়ে। যেহেতু গানের কথাগুলো রোমান্টিক, আশেপাশের পরিবেশটা শান্ত, এবং আপনি বসে আছেন কার্পেট বিছানো কোন মেঝেতে, তখন স্বাভাবিকভাবে ভবিষ্যত সেই দৃশ্যকল্পগুলোয় নানা ধরনের রং ভেসে বেড়াবে পেঁজা পেঁজা তুলোর মত, অল্প অল্প বাতাসে মেয়েদের চুল উড়বে, ছেলেদের হাফ শার্ট ফুলে ফুলে উঠবে, ভবিষ্যতের ঘটনা কিন্তু তৃপ্তির ছোঁয়া পাওয়া যাবে এমন সময়েই। 

এরকম কোন সময়ে অল্প কিছু মানুষ মেঝেতে বিছানো কার্পেটে বসে অলসভাবে স্মৃতি রোমন্থন করে না, করে না কোন ভবিষ্যত স্বপ্ন রচনা, তারা লিখে। লিখতে লিখতেই যদি লম্বা চুলের ছোট বোনটা গোসল করে আসার পর খোঁপা থেকে ভেজা টাওয়েল খুলে বলে - ভাইয়া, আমার চুল আচঁড়ে দিবা? আর ভাইয়াটাও যদি অনভ্যস্ত হাতে চুলে চিরুনী চালানোর সময মনে মনে হিসেব করে - পনেরো বছর, অথবা ষোল, কিংবা সতেরো বছর পরে, তার আম্মার চুলে চিরুনী চালানোর পরে আজ আবারও কোন লম্বা চুলে চিরুনী চালাচ্ছে - তখন কেমন অনুভূতি হয় বলেন তো? 

খুব সুখ না, তবে খুব অসুখও নয়, বরং এলোমেলো হলেও কিছু যে লেখা হচ্ছে তার যে তৃপ্তি সেই তৃপ্তি নিয়ে লিখছি - কেমন আছেন প্রিয় ফাহমিদা ?
11/8/13, 10:28 PM

দারাশিকো, 

আপনাকে বলেছিলাম শুক্রবার একটু ব্যস্ত থাকব। ব্যাপারটা খুলেই বলি। আম্মু বলছিলো প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দেয়ার জন্য। আজ পরীক্ষা ছিলো। 

সিট পড়লো পলি টেকনিক্যাল কলেজে। অনেক দূরের পথ তাই সকাল ৮ টায় বের হতে হলো। পরীক্ষা ১০ টায় ছিলো। এক মেয়ে আমার সাথে বসলো। ওকে আমি 'তুমি' করে সম্ভোধন করছিলাম। অনেক পরে মেয়েটি জানালো সে মাস্টার্স পরীক্ষা দেবে।আমি খুব লজ্জা পেয়েছি। প্রতিজ্ঞা করেছি এখন থেকে সবাইকে 'আপনি' বলবো! পরীক্ষা শেষে আরেকটি মেয়ের সাথে হাঁটছিলাম আর অটোরিক্সা খুঁজছিলাম। মেয়েটি আমাকে 'তুমি' করে বলছিলো আর আমি 'আপনি'! কিছু সময় পর মেয়েটি খুব লজ্জা পেলো। কারণ ও মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আবার ক্লাসে এক ছেলেকে ধমকও দিতে হয়েছে। ছেলে অযথা বকবক করছিলো। 

বাসার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নেই। আম্মা একটু অসুস্থ। ডায়বেটিকস বেড়েছে অনেক। কলোস্ট্রোলের মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু তিনি এমন ভাব করছেন যেন কিছুই হয় নি। আম্মার এই অবস্থা দেখে কান্না পাচ্ছে। আম্মা তাকাচ্ছেনও না! আপনি এলোমেলো লিখছেন।

তবে কয়েকটি লাইন খুব ভালো লিখেছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। 

আপনার মানসিক অবস্থা কেমন? অস্থিরতা কমেছে? 

আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার আম্মার জন্য দোয়া করবেন। 

আর লিখছিনা। ভালো থাকবেন। 

ফাহমিদা।
11/9/13, 9:27 AM

আসসালাম। 

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই লিখতে বসলাম। সাড়ে আটটায় অবশ্য সকাল হয়ে যায়, কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পর বাথরুম ঘুরে ফ্রেশ হয়ে না আসা পর্যন্ত ভোর, কি বলেন? বাসিমুখে লিখছি বলে নাক কুচকাবেন না যেন! 

আমার বাম নাক বন্ধ হয়ে আছে গত পরশু থেকে। ঘুম থেকে উঠেই টের পেলাম বাম নাক বন্ধ - সর্দি। আমি মোটামুটি সতর্ক লোক - রাতে পাখা ঘোরে না, মাথার দিকের জানালা-দরজা বন্ধ করে মাথা থেকে কোমড় পর্যন্ত কাঁথায় ঢেকে ঘুমাই - কিন্তু ঠান্ডা ঠেকানো গেল না। কয়দিন ভোগাবে কে জানে! ঠান্ডা সর্দি হল ছ্যাচড়া রোগ - জ্বর হলেও লোকে জিজ্ঞেস করে - কবে হল, কেন হল। জ্বর আছে কিনা জানার জন্য কপালে হাত দেয়, সেটা কিন্তু দারুন লোভনীয় এবং উপভোগ্য, কিন্তু সর্দি হলে কেউ নাকে হাত দেয় না, কিভাবে হল সেটাও কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করে না, সরাসরি পরামর্শ দেয় - হিসটাসিন খেয়ো। 

এই ছ্যাচড়া রোগ নিয়ে লিখছি - গতকালকে আপনার চিঠি পরে একটি মেসেজ যখন পাঠিয়েছিলাম, তখনো নাক বন্ধ, তখনো ছ্যাচড়া রোগের রোগী। মেসেজের ডেলিভারী রিপোর্ট আসে নাই বলে দুবার কলও দিয়েছিলাম এয়ারটেল নাম্বারে - ডেলিভারী হয় নাই। নরমাল ডেলিভারী না হলে কি হয়? সিজার? অ্যাবরশন? সেগুলোও তো ডেলিভারী। তবে কি ডেড বেবি যে কিনা মায়ের কাছে পৌছায় না কখনো? বোধহয় তাই হবে - ডেড মেসেজ, ডেড কল। 

ডেড মেসেজে লিখেছিলাম আপনার রিপ্লাই পছন্দ হয় নাই - কেমন দায়সারাভাবে লিখেছেন। আম্মার অসুস্থ্যতা নিয়ে খুব বেশী অস্থির হয়ে আছেন? আম্মা কথা শুনতে না চাইলে প্রজ্ঞাপুকে দিয়ে বলান, কাজে দিবে। আগের এলোমেলো চিঠিটা পাঠানোর পরে শংকায় ছিলাম - গানটা আপনাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছি ধরে নিলে কি না কি জটিলতা তৈরী হয়। গানটা শুনছিলাম তখন, একটু আগে সকালবেলা বিছানা থেকে উঠার সময়ও একবার শুনলাম। এই কথা কাউকে বলার জন্য সেরকম মানুষ থাকা লাগে - বড় অদ্ভুত নিয়ম! আমি কিন্তু একবার এই নিয়ম ভেঙ্গেছিলাম। 

তখন কলেজে পড়ি। কোন এক ঈদের ছুটিতে ময়মনসিংহ গেলাম ঈদ করতে। ফিরে আসার পরে ক্লাসের মেয়েদের একটা গ্রুপ যারা আমাকে নিয়ে একটু হাসাহাসি করত - আমার রোবট কন্ঠস্বরের জন্য আর আমার সাথে বেশীরভাগ সময় থাকা কালো-মোটা মেয়েটার সাথে আমার অ্যাফেয়ার চলছে এমন ধারনা করে - তাদের একজন জিজ্ঞাসা করেছিল - 'আমাদের জন্য কি নিয়ে আসছো ময়মনসিংহ থেকে?' আমি বলেছিলাম - বুক ভরা ভালোবাসা। মেয়ের দল হা হা হা করে হেসেছিল। সেই দলের নেত্রী যে মেয়েটা তার বিয়ে আগামী মাসের ছয় তারিখ। দাওয়াত পেয়েছি। দাওয়াত থেকে পালানোরও ফন্দিফিকির করছি। গতকাল আমাদের বাসায় রান্না করেন যে খালা তার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত ছিল, এখান থেকেও পালিয়েছি। এইরকম পালানোর মানসিকতা কি হাসান ভাইয়ের আছে? 

আপনার কাছ থেকে হাসান ভাইয়ের যে বর্ণনা শুনেছি, তাতে মনে হয় না হাসান ভাইয়ের এই স্কেপটিক স্বভাব আছে। হাসান ভাইয়ের কথা যে আমি কৌশলে এই চিঠিতে ঢুকিয়ে দিয়েছি আপনি কি টের পাচ্ছেন? গত চিঠিতে আপনি হাসান ভাইয়ের কথা লিখেন নি। তার আগের চিঠিতে হাসান ভাইকে এনেছেন বিনা প্রয়োজনে। চিঠি পড়ে আমি মনে মনে হেসেছি। আমার মনে হয়েছে - আপনি আমাকে ক্ষ্যাপাতে চান, জেলাস ফিল করাতে চান। কেন চাবেন তার পক্ষে অবশ্য কোন যুক্তি নাই। হয়তো আপনি চান না, চলে আসে। বেচারা হাসান ভাই - অনুভব করতেও পারে না কত কত ভালোবাসা নিয়ে একজন ফাহমিদা তার জন্য অপেক্ষা করে আছে/থাকতো। হাসান ভাইয়ের জানার দরকার নাই, ফাহমিদা যে জানে, তাতেই চলবে - কি বলেন? ভাগ্যিস, ভালোবাসার উৎসমুখ হল জমজমের কুয়া, না হয় কি হতো ভাবুন তো! 

থাক, দরকার নেই এত ভাবার, ভেবে কি হয় বলেন? যন্ত্রনা বাড়ে কেবল। যন্ত্রনার সমাপ্তি হোক - ফি আমানিল্লাহ!

দারাশিকো

(বিঃদ্রঃ এই চিঠিতে একটা বিশেষ স্টাইল ফলো করা হয়েছে - দেখেন তো বের করতে পারেন কিনা! )

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *