বলিউড যেভাবে উন্নত হলো

বলিউড যেভাবে উন্নত হলো বলেছেন সরকার মোহন
নাইজেরিয়ার ফিল্ম ও ভিডিও সেন্সরবোর্ডের সদস্যদের সাথে সরকার মোহন

ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানীর পক্ষে সমর্থন দেয় যে সকল দর্শক তাদের বেশীরভাগের যুক্তি হল – বলিউড যেভাবে উন্নত হলো ঠিক সেভাবে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরী করলেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বলিউড বা ভারতের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির মতো উন্নত হবে এবং বিশ্বমানের না হলেও ভারতীয় মানের চলচ্চিত্র বাংলাদেশেই তৈরী করা সম্ভব হবে। এই বক্তব্যের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তাদের অনেকেই উদাহরণ হিসেবে ভারতের কোলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উদাহরণ তুলে ধরেন। আসলেই তাই?

বিশ বছর আগে কোলকাতার চলচ্চিত্র বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ ছিল এবং এখন শুধুমাত্র বলিউড বা হিন্দী ভাষার চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে কোলকাতার চলচ্চিত্র উন্নতি করেছে – এমন বক্তব্যের জবাবে আমি সবসময়ই বলে এসেছি – প্রতিযোগিতা নয়, যথাযথ সরকারী উদ্যোগই চলচ্চিত্র শিল্পকে উন্নত করতে পারে, প্রতিযোগিতা বড়জোর সহায়ক উপাদান হতে পারে। পাল্টা জবাবে শুনতে হয় – স্বাধীনতার চল্লিশ বছর অনেক অনেক সুবিধা প্রদাণ করার পরেও যেহেতু আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প উন্নত হতে পারে নি, তখন প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

বাংলাদেশের সরকারগুলো চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে কি করেছে সে ফিরিস্তি না দিয়ে ভারতের সরকার, যার উদাহরণ বারবার আমাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে, কি করেছে সেটা জানার চেষ্টা করছি কিছুদিন ধরে। ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে আজ নাইজেরিয়ার পত্রিকা সানডেট্রাস্ট এর একটা আর্টিকেল পাওয়া গেল – শিরোনাম How We Developed Bollywood। এটি মূলত একটি সাক্ষাতকার।

বলিউড যেভাবে উন্নত হলো

২০১২ সালের নভেম্বরে ভারতের গোয়া’য় (Goa, অশ্লীলার্থে ব্যবহৃত নয়) International Film Festival, India আয়োজন করে গোয়া রাজ্য সরকার যেখানে লাইফ অব পাই-র মত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। সানডেট্রাস্টের রিপোর্টার এ সময় ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর সরকার মোহনের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন যার মধ্যে কিভাবে ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প উন্নত হয়েছে এবং নাইজেরিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে কি করা উচিত তা গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়াও ফেস্টিভ্যাল সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর আছে – তবে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী সংক্রান্ত বিষয়ে দুটো প্রশ্ন এবং তার উত্তর অনুবাদ করে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।

ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কে বলুন। সরকারের ভূমিকা কতটুকু এর পেছনে?

উত্তর: ভারতে অনেকগুলো প্রদেশ রয়েছে এবং প্রত্যেকটি প্রদেশ এ শিল্পকে সহায়তা প্রদান করে। যেহেতু আমাদের প্রদেশ অনেকগুলো, তাই শিল্পও অনেকগুলো। প্রত্যেকটি শিল্প তার নিজ নিজ সরকার দ্বারা সাহায্যপুষ্ট। রাজ্য সরকার ছবি নির্মানের জন্য সাবসিডি দেয়, সরাসরি অর্থ প্রদান করে না। তরুণ নির্মাতাদের উৎসাহিত করার জন্য তাদের বেশ কিছু ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড চালু করেছে।

দেশে কিছু ফিল্ম স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। তুমি যদি ফিল্ম কালচার তৈরী করতে চাও, তাহলে ভালো ফিল্ম স্কুল থাকতে হবে। তোমাদের নাইজেরিয়াতে একটি ফিল্ম স্কুল আছে বলে শুনেছি, কিন্তু সেখানে কি পড়ানো হচ্ছে সে ব্যাপারে তোমাকে স্পষ্ট হতে হবে। এছাড়াও কালচারার এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে। নাইজেরিয়া এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে প্রফেশনাল এবং শিক্ষার্থীদের আদান প্রদান করা উচিত।

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি সহায়তা না করে তাহলে কোন শিল্পই সম্ভব না। আমাদের দেশে এটা আমরা করেছি এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে যেখানে ভালো ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে সেখানে সরকার ফান্ড দিচ্ছে। এই ফেস্টিভ্যালটি শতভাগই সরকার ফান্ড করছে। স্পন্সর আছে যা সহায়তা করছে কিন্তু তারপরও সরকার একে ফান্ড করছে। ইন্ডিয়ায় বেসরকারী ফেস্টিভ্যালও আছে কিন্তু সেগুলো সরকারীগুলোর মত এত ভালো না। কারণ হল, যখন বেসরকারীভাবে করা হয় তখন তার নিজস্ব কিছু এজেন্ডা থাকে। কিন্তু সরকারী ফেস্টিভ্যালে এরকম কোন উদ্দেশ্য থাকে না, এটা শুধুই ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন এবং প্রসারের জন্য করা হয়।

ইন্ডাস্ট্রিতে প্রফেশনাল থাকা খুবই জরুরী। প্রফেশনাল লোকেরা সঠিক পলিসি তৈরী করবে, এমন পলিসি যেখানে থিয়েটার এবং অন্যান্য বিষয়ও গুরুত্ব পাবে। গোয়া সরকার সম্প্রতি ফিল্ম থিয়েটার স্থাপনের জন্য ইনসেনটিভ দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। ইনসেনটিভ মানে হল ৫০ বা ৯০ বছরের জন্য জমি লিজ দেয়া, ফ্রি-তে বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ করা ইত্যাদি।

এই সুযোগ কি সবার জন্য?

উত্তর: না। এটা শুধু স্থানীয়দের জন্য। পানি এবং বিদ্যুত ব্যবহারের এ সুযোগ আগামী পাঁচ বা দশ বছরের জন্য দেয়া হবে। ফলে, কেউ যদি থিয়েটার স্থাপন করতে চায়, তাহলে সে জমি পাবে, বিদ্যুত পাবে, পানিও পাবে। এ বিষয়গুলো সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে শুরু করতে হয়। সরকার অর্ধেক পথ এগিয়ে গেলে বেসরকারী উদ্যোগে বাকী অর্ধেক পথ পার হওয়া সম্ভব। কোলাবোরেশন এখানে মূল কথা।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এর ভিত্তিতেই এগিয়েছে এবং এ দিকে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ইন্ডিয়ার এটা ৪৩তম আসর। ১৯৫২ সালে ইন্ডিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী এটা শুরু করেছিলেন। It is therefore important that this country gives back to cinema.

মূল সাক্ষাতকার: সানডেট্রাস্ট নাইজেরিয়া

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *