কাক

প্রকৃতির ঝাড়ুদার কাক বেশ পরিশ্রমী। কাকের এই পরিশ্রমী মনোভাব বোঝা যায় তাদের বাসা তৈরীর চেষ্টা থেকে।
ছোটবেলায় গাছ ছাটাই করলেই দুই একটা কাকের বাসার পতন হতো। সুন্দর বাসা বলে বাবুই পাখির বাসা বেশ খ্যাত, সে তুলনায় কাকের বাসা ক্ষ্যাত। স্থায়ীত্ত্বের কথা ভাবলে অবশ্য কাকের বাসাকে বেস্ট বলতে হবে। ভেঙ্গে ফেলা বাসার ভেতর থেকে বের হত দুনিয়ার সব জঞ্জাল, আর বিভিন্ন সময় হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র – গোলাপী লাক্স সাবান কিংবা চুলের ফিতা পর্যন্ত। এগুলো সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপকরণ। আর বাসাকে মজবুত করার জন্য পাওয়া যেতে সুতা, বড় সরু পাতা/খড়ের টুকরা এবং বিভিন্ন মাপের তার – তামার তার, সিলভারের তার ইত্যাদি (আমরা বলতাম গুণা)। বিশাল বিশাল এই তারগুলো জোগাড় করা এবং পেচিয়ে পেচিয়ে বাসা তৈরী নিঃসন্দেহে পরিশ্রমসাধ্য কাজ।

এখন যেখানে থাকি, তার পাশের বিল্ডিংটা আমার ফ্ল্যাটের থেকে একতলা ছোট, অসম্পূর্ণ বিল্ডিং। সিড়িঘরে ছাদ তৈরী হয়েছে টিন দিয়ে, সেখানে নানারকম অদ্ভুত জিনিসপত্রের সাথে আছে মোটা তারের টুকরা, এক ইঞ্চি পুরুত্বের দুটো রড। গত দেড়মাস ধরে আমার সকালে ঘুম ভাঙ্গে এই টিনের চালে আওয়াজে। প্রতিদিনই দেখি, একটা কাক সেই মোটা তারের টুকরা ধরে টানাটানি করে, লম্বায় একটু বড় বলে একবারে নিয়ে যেতে পারে না, কিন্তু টিনের চালে তারের সংঘর্ষে শব্দও কম হয় না। বিরক্তিকর অবস্থা।

এই অবস্থা চলেছে প্রায় দেড়মাস। তিনটুকরা তার এই দেড়মাস সময়ের ব্যবধানে নিয়ে যেতে পেরেছে কাক। কোন গাছে বাসা বানাচ্ছে জানি না, জানতেও চাই না, উৎপাত বন্ধ হয়েছে এই শান্তি। সপ্তাখানেক বন্ধ ছিল। আজকে সকালে আবারও টিনের চালে শব্দ শুনে উঠলাম – আবার কি পেল?

শয়তানটা এবার রড ধরে টানাটানি করছে 🙁

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *