বাংলাদেশে কমিউনিটি ফিল্ম: কি, কেন, কিভাবে

কমিউনিটি ফিল্ম প্রত্যাবর্তন এর দৃশ্য

এ বছরের অক্টোবর মাসে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিটি ফিল্ম সম্পর্কে নিউজ প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এই নিউজের সারমর্ম হল – রাজশাহীতে দেশের প্রথম কমিউনিটি ফিল্ম তৈরী হচ্ছে। সিনেমার নাম ‘প্রত্যাবর্তন’, পরিচালনা করেছেন আহসান কবির লিটন। ছবির মহরত অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক উপস্থিত ছিলেন।

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা আহসান কবীর লিটন
অভিনয় প্রশাখা, প্রকৃতি, শাম্মা, মিজানুর রহমান, কামারুল্লাহ সরকার, মাহমুদ হোসেন মাসুদ, পারভেজ চৌধুরী প্রমুখ
সিনেমাটোগ্রাফার কিশোর মাহমুদ
শিল্প নির্দেশনা সুব্রত ভৌমিক ও মনিরুজ্জামান
কারিগরি সহায়তা বরেন্দ্র প্রোডাকশন হাউজ
পরিবেশনা বরেন্দ্র প্রোডাকশন হাউজ
প্রযোজনা ডা. এফ.এম.এ. জাহিদ, পারভেজ চৌধুরী এবং মিজানুর রহমান

কমিউনিটি ফিল্ম কি, কেন ও কিভাবে

কমিউনিটি ফিল্মের কনসেপ্ট বাংলাদেশে নতুন। কমিউনিটি সিনেমার সাথে কমিউনিটির সম্পর্ক। কোন নির্দিষ্ট কমিউনিটি বা এলাকাকে কেন্দ্র করে গল্প-চিত্রনাট্য তৈরী করে ওই কমিউনিটির লোকজনই কলাকুশলী হিসেবে ভূমিকা পালন করে স্থানীয় উপকরনের সহায়তায় যে ফিল্মটি তৈরী করে সেটাই কমিউনিটি ফিল্ম।

কমিউনিটি ফিল্ম সাধারণত শিক্ষা, পরিবেশ, চিকিৎসা ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরী হয়। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি অনুষঙ্গ হিসেবে আসতে পারে। ‘প্রত্যাবর্তন’ সিনেমার পরিচালক মহরত অনুষ্ঠানে কমিউনিটি চলচ্চিত্রের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেন এভাবে – “কোন বিশেষ অঞ্চলের রাজনীতি, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বা মানুষের সামগ্রিক জীবনযানের উপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাবকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে নির্মিত চলচ্চিত্রই হচ্ছে কমিউনিটি ফিল্ম। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের মূল বিষয়বস্তুকে ব্যাহত না করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আনুসাঙ্গিক অন্যান্য উপকরণাদি যেমন ক্যামেরা, ট্রলি, এডিটিং, জিব-আর্ম, অভিনেতা- অভিনেত্রী, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, প্রযোজক ইত্যাদি হবে নির্দিষ্ট অঞ্চলের।”

উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৭০ এর দশকে কমিউনিটি সিনেমার কনসেপ্ট শুরু হয়। উদ্দেশ্য সহজেই অনুমেয় – ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে সিনেমা নির্মানকে আরও সহজতর করে তোলা। ঠিক কমিউনিটি ফিল্মমেকিং নয়, তবে ১৯২০এর দশকে রাশিয়ার ফিল্ম ট্রেনের কাজটাও অনেকটা এরকমই ছিল। ট্রেনটি রাশিয়ার এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে ছুটে যেত, সেই ট্রেনেই ছিল সিনেমা নির্মানের যাবতীয় যন্ত্রপাতি। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সিনেমা নির্মান করে দর্শকদের দেখানো হত। মূলত কমিউনিজমের বাণীকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছে দেয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি দেশের কোন নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রিভূত হওয়ার বেশ কিছু সমস্যা আছে। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাগুলোর সবাই সেই ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার সুযোগ পায় না। ভারতের মত বিশাল দেশে কয়েকটি স্থানে ইন্ডাস্ট্রি কেন্দ্রিভূত হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের মত ছোট এবং গরীব দেশে এটা স্বপ্নতুল্য। ফলে, কমিউনিটি ফিল্মমেকিং অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। ্সত্যি বলতে কি, কমিউনিটি ফিল্মমেকিং ব্যাপারটা একদম নতুনও নয়। একঘন্টার কমিউনিটি সিনেমা তৈরী হচ্ছে বহুদিন আগ থেকে। এসব ফিল্ম সাধারণত হাস্যরসাত্মক হয়, আঞ্চলিক ভাষার প্রাধান্য থাকে। এই ধরনের সিনেমাগুলো যতটা না সিনেমা, তারচে’ বেশী নাটক। ‘প্রত্যাবর্তন’ এক দিক থেকে এইসব এক ঘন্টার নাটকের থেকে আলাদা। ‘প্রত্যাবর্তন’-এর দৈর্ঘ্য হবে এক ঘন্টা ৫০ মিনিট।

কমিউনিটি ফিল্মের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই সিনেমা সারা দেশে প্রচারের চেষ্টা করা হবে। বাংলাদেশের সিনেমা ডিস্ট্রিবিউশন পদ্ধতি সম্পর্কে যতটুকু জানি, তাতে ধারনা করছি এই সিনেমা দেশের সিনেমাহল গুলোয় মুক্তি পাবে না। এর আগে শর্টফিল্মমেকাররা কিংবা তারেক মাসুদ যেভাবে ঘুরে ঘুরে তাদের সিনেমা প্রদর্শন করেছেন – সেভাবে প্রদর্শিত হবে। এ ধরনের প্রদর্শন ব্যবস্থা কমিউনিটি সিনেমার ভবিষ্যতকে শংকাযুক্ত করে তুলবে। ফলে, কমিউনিটি ফিল্মের আলাদা ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।

‘প্রত্যাবর্তন’ এর মাধ্যমে যে নতুন পথ তৈরী হল সেই পথ আরও বিকশিত হোক বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী পথিকের পথচলায়। পাল্টে যাক বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। গুড লাক বাংলাদেশ।

সূত্র:

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

10 Comments on “বাংলাদেশে কমিউনিটি ফিল্ম: কি, কেন, কিভাবে”

  1. বাহ, সব দিক থেকেই মনে হয় পরিবর্তনের হাওয়া লাগছে।

  2. খুব ভালো প্রচেষ্টা। কিন্তু মূলধারার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে কি না সে বিষয় আমার সন্দেহ আছে। কারণ সেই মানের অভিনেতা ও কলাকুশলী পাওয়া যাবে না।

  3. Boss havvy laglo pore…khub e ashabanjok khobor…bisheshoto cinema bananor shopno dekha manusder jonno to botei

    1. দারাশিকোর ব্লগে স্বাগতম দাদা 🙂
      খুব খুশি হব ঘুরে দেখার পর যদি কিছু পরামর্শ দিয়ে যান। ভালো থাকবেন 🙂

Leave a Reply to তন্ময় Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *