২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটা সেরা বিদেশী মুভির ক্যাটাগরীতে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল কিন্তু পুরস্কার পায় নি। মনট্রিল ফিল্ম জার্নাল একে ৪ এ সাড়ে তিন দিয়ে বলেছেন পরিচালক তার সেরা কাজ করেছেন এই সিনেমায়। দ্য গেজেট একে ৫ এ ৫ দিয়ে বলেছেন, 'মাস্টারপিস'। রোটেন টম্যাটোস বলেছে এই সিনেমার ৯২শতাংশ জায়গা সজীব, ফ্রেশ। তাদের রেটিঙ - ৭.৯/১০। অস্কার না পেলেও এখন পর্যন্ত ৩১টি পুরস্কার জিতেছে এই সিনেমা। এত গুনে গুনান্বিত যে সিনেমা তা না দেখার কোন কারন থাকতে পারে না।
মায়ের হঠাৎ মৃত্যুর পরে যমজ ভাই বোন সিমন ও জেন মারওয়ানের নিকট দুটি চিঠি উপস্থাপন করে নোটারি। মা তার শেষ ইচ্ছা নোটারির নিকট জানিয়ে গেছেন - মেয়েকে দেয়া চিঠিটি পৌছুতে হবে তাদের বাবার নিকট। আর ছেলেকে দেয়া চিঠিটি পৌছুতে হবে তাদের ভাইয়ের নিকট। যতদিন পযর্ন্ত তা না হচ্ছে ততদিন তাকে কবর দেয়া হবে উপুর করে। কঠিন এই শর্ত। ভাই বোনের নিকট অবাস্তবও বটে। কারণ তাদের বাবাকে তারা দেখেনি কোনদিনই, তাদের কোন ভাই আছে সে কোথাও কোনদিন শোনা হয় নি মায়ের নিকটে। তবে কেন এই কঠিন শর্ত? যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই কোন ধারনা নেই তাদের খুজে বের করতে হবে, কিন্তু কিভাবে?

কানাডা থেকে নির্মিত এই সিনেমার প্রেক্ষাপট কানাডা নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ যা স্পষ্ট নয়। তবে কাহিনী বিন্যাস ও ঘটনাপ্রবাহ লেবাননকেই ইঙ্গিত করে। খ্রীষ্টান তরুনী নাওয়াল একজন শরনার্থীকে ভালোবেসে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তার ভাইয়েরা তার প্রেমিককে হত্যা করে, অথচ নাওয়ালের পেটে সন্তান। গভীর গোপনীয়তার মধ্যে এই সন্তানের জন্ম হয়, জন্মের পরই নাওয়ালের নানী তার পায়ে তিনটি উল্কির ফোটা দিয়ে দেন, যেন সন্তানের মা ভবিষ্যতে সন্তানকে চিনে নিতে পারে। তারপর সেই সন্তানকে পাঠিয়ে দেয়া হয় এতিমখানায়। ঘটনাপ্রবাহে দেশে সিভিল ওয়ার শুরু হলে নাওয়াল তার ছেলেকে খুজে ফেরে এবং একসময় চরমপন্থী এক দলের সাথে যুক্ত হয় ও পরিকল্পনা মোতাবেক বিপক্ষ খ্রীষ্টান দলনেতাকে হত্যা করে। তারপর শুরু হয় জেলখানায় তার দুর্বিষহ জীবন।
পলিটিক্যাল আবহে নির্মিত এই সিনেমা পলিটিক্যাল নয়, পুরোটাই ফিকশন। কিন্তু নাওয়ালের এই অধ্যায়টুকু মিলে যায় সুহা বেচারার জীবনের সাথে। সুহা বেচারা একজন লেবানিজ মেয়ে যে একুশ বছর বয়সে সাউথ লেবানন আর্মির জেনারেলকে হত্যা প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় এবং ধরা পরে। তারপর কুখ্যাত খিয়াম জেলে চরম নির্যাতন আর বঞ্চনায় কাটে দীর্ঘ দশটি বছর। তার এই যন্ত্রনাকাতর জীবন নিয়ে তিনি দুটো অটোবায়োগ্রাফি লিখেছেন।
নাওয়াল মারওয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লুবনা আজাবাল, প্যারাডাইস নাউ সিনেমায় তার সাথে আপনাদের পরিচয় হবার কথা। অসাধারণ এই কাহিনীর সাথে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে স্কর্চহেড নামের একটি নাটক থেকে। গল্পের প্রতিটি বাঁকে নতুন আর চমকপ্রদ ঘটনাবলী সিনেমাটিকে টানটান উত্তেজনাময় করে তুলেছে। পরিচালক Denis Villeneuve এই উত্তেজনাকে দর্শকের মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য অবশ্যই বাহবা পাবেন। দর্শককে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য যে গল্পকে তিনি বেছে নিয়েছেন তা কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্ন অবান্তর হয়ে দাড়ায় দর্শকের কাছে, কারণ সিনেমা শেষ হতে হতে নাওয়াল মারওয়ানের জীবন ছুয়ে গেছে সব দর্শককেই, ছুয়ে যাবে আপনাকেও। বাজি?
24 মন্তব্যসমূহ
সর্বপ্রথম মুনতাই এ চবিটা দেখার ব্যাপারে রেকমেন্ড করে। আমিও ডাউনলোড করে ফেলে রেখে দিয়েছিলাম। ৩-৪ দিন আগে অবশেষে দেখলাম। পুরা হতভম্ব হয়ে গেছি। মাস্ট সী মাস্টারপীস।
উত্তরমুছুনকানাডা থেকে নির্মিত এই সিনেমার প্রেক্ষাপট কানাডা নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ যা স্পষ্ট নয়। তবে কাহিনী বিন্যাস ও ঘটনাপ্রবাহ লেবাননকেই ইঙ্গিত করে।
আমারও তাই মনে হয়। তবে একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? নাওয়াল মারওয়ান যখন তার চাচর কাছে চলে যায় এবং পত্রিকার কাজে যুক্ত হয় তখন একদিন খবর আসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। নাওয়াল আর তার কাজিন একটা রুমে বসে আন্দোলনের কথা বলছিলো। সেই রুমেই একটা জায়গায় লেখা দেখতে পাওয়া যায় প্যালেস্টাইন
এখন ই দেখতে ইচ্ছা করছে ..................।
উত্তরমুছুনএখনও দ্যাখা হয়নি, দেখে নিতে হবে, ওয়াচলিস্টে থাকলো। ভালো রিভিউ :)
উত্তরমুছুনআপনার নতুন কোন লেখা দেখলেই যেমন মনের মধ্যে কেমন যেন একটা সুখানুভূতি হয়, সাথে সাথে চরম একটা ভয় এও থাকি, কী যে মুভির নাম দিবেন, ডাউনলোড লিঙ্ক পাওয়া যাবে তো! দিলেন তো টেন্সন এ ফালায়া, এখন এই মুভি তো আমি দেইখাই ছাড়ুম।
উত্তরমুছুনভাই দয়া করে ডাউনলোড লিঙ্ক দেন......
উত্তরমুছুনhttps://www.facebook.com/groups/BD.Movie.Lovers/391154890937888/?ref=notif¬if_t=group_comment
উত্তরমুছুনহুম চোখে পড়েছিল লেখাটা। তবে সেটা প্যালেস্টাইনকে ইংগিত করেছে বলে মনে হয় নাই, প্যালেস্টাইনের আগে লেখা ছিল 'আই' - তার মানে কি 'আই .. প্যালেস্টাইন', মাঝে লভ শব্দটা থাকবে? জানি না। নাওয়ালের দিক থেকে প্যালেস্টাইনকে ভালোবাসার ব্যাপারটা ঠিক খাপ খায় না।
উত্তরমুছুনবরং নাওয়ালের সাথে সুহার মিল একে লেবাননের দিকে বেশী ইংগিত করে। ডেভিস ভালো বলতে পারবে :)
:)
উত্তরমুছুনদেখার মতই সিনেমা। দেখুন :)
দারাশিকো'র ব্লগে সুস্বাগতম পিনাকপাণি :)
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আবার আসবেন :)
হে হে হে ... দেখেন। ভালো সিনেমা দেখার মজাই আলাদা :)
উত্তরমুছুনরিভিউ দারুণ লাগছে।স্পয়লারের নামগন্ধ নাই।প্লাস,অল্পকথায় লিখছেন।
উত্তরমুছুন+++
উৎসর্গের জন্য ধইন্যা।
কি চমৎকার দেখা গেল, অবশেষে মুনতা আইসা গেল :) :)
উত্তরমুছুনভালো থাইকেন বস :)
আপনিও ভাল থাইকেন।আরও অনেক সুন্দর সুন্দর রিভিউ চাই।
উত্তরমুছুনছবিটা দেইখা পুরা তব্দা খাইয়া বইসা আছি.....................!!!!
উত্তরমুছুনthanks...
উত্তরমুছুনরিভিউ পরে সিনেমাটা দেখার স্বাদ বেড়ে গেছে!
উত্তরমুছুনআগেই দেখছিলাম ইন্টারেস্টিং বিষয় হইলো হুদাই ডাউনলোড করসিলাম মানে মুভিটার সম্পর্কে জানতাম না সার্ভারে ছিল পাইছি তাই নামাইছি :D । কিন্তু আপনে দেখেন নাই সেটা জানতামনা !!!!!!!!!!!!!!!!!!!! যাক অবশেষে দেখছেন এইটাই শান্তি । আমার খুব প্রিয় মুভির লিস্ট গুলোর মধ্যে এইটা ১ টা । খুব ভাল লিখসেন মুনতা ভাইয়ের সাথে একমত এতটুকুও স্স্পয়েলারের নাম ও নাই :D ।
উত্তরমুছুনআইচ্ছা :)
উত্তরমুছুনai post ti ami provar maddhome khuje peyesi.mane post ta dekhe kano jeno amr mone holo dekhi to open kore.
উত্তরমুছুনsurotey chomok!!!bodle debar essa amr az o gelo na.are ato dekhi amr moner ktha!!!!
jaihok pore movie ti somporke porlam n feel interested.movie ta dekbo darasiga vair jonno(naam vul hole maf cheye nissi)
ekto kosto laglo,apni jevabe nijer moner sopnotak ekto ekto kore bastob korsen ami kinto ta pari na..........
meghe meghe bela onek holeo ekhon jibonta suroi kora holo na
mone hoy kiser jeno ekta opekkha........
sry guyz onek falto ktha bole fellam...
দারাশিকো'র ব্লগে স্বাগতম আজমান তমাল।
উত্তরমুছুনমুভিটা দেখুন, হতাশ হবেন না সেই গ্যারান্টি দিচ্ছি।
Darashiko - এটাই নামের ইংরেজি বানান। ভুল করে ফেলেছেন - সমস্যা নাই :)
আপনি পারেন কিনা সেটা বোধহয় শুরু করার পর বোঝা যাবে - শুরু করে দিন, পেরেও যাবেন। শুভকামনা থাকলো।
আবারও আসার আমন্ত্রন রইল। :)
মাস্টার মানুষরা তব্দা খাইলে হপে? ;)
উত্তরমুছুনwelcome :)
উত্তরমুছুনএইমাত্র দেখলাম...... মাথামুথা খারাপ হয়া গেল রে ভাই...... ভয়াবহ রকমের জোস মুভি......
উত্তরমুছুন[…] সিনেমায় শুধুমাত্র এই ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তিন ব্যক্তি – একজন হত্যাকারী ‘দি কিলার’, একজন নারী শিক্ষার্থী ভেলেরী এবং একজন পুরুষ শিক্ষার্থী জ্যঁ ফ্রসোঁ-র দৃষ্টিকোণ থেকে। পরিচালক বেশ সচেতনভাবেই তার কোন বক্তব্য প্রকাশ করার চেষ্টা করেন নি, কোন এক বিশেষ চরিত্রের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণও করেন নি। পুরো চলচ্চিত্রটি সাদাকালো, এর কারণ হিসেবে ভায়োলেন্স অংশটুকু কম উপস্থাপন করার পাশাপাশি অতীতের ঘটনাকে তুলে ধরাও গুরুত্বপূর্ণ। সাদাকালোয় চিত্রায়িত বলে চলচ্চিত্রের সৌন্দর্য্য ভিন্নমাত্রায় বিকশিত, চমৎকার কিছু শট এবং ক্যামেরার কাজ চোখে পড়বে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক Denis Villeneuve ২০১০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্র Incendies পরিচালনা করে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন। (Incendies – দারাশিকো’র ব্লগ) […]
উত্তরমুছুন