
কমল সরকারের কাহিনীতে সিনেমার নায়ক জেফ একজন গাড়ির মিস্ত্রী। কিন্তু প্রথম দর্শনেই ধনীর দুলালী জারা'র প্রেমে পড়ে যায় । জারা'র ভালোবাসা অর্জনের জন্য ধন সম্পদের মালিক হবার চেষ্টায় অর্থ উপার্জনের জন্য গাড়ি সারাই পেশা থেকে সরে গিয়ে জুয়ারীতে পরিণত হয় জেফ। অল্প সময়েই সে দক্ষ খেলুড়ে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং তার দৈনিক উপার্জন লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এদিকে, তার দক্ষতাকে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন এরফান চৌধুরী, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও খেলতে যায় জেফ, টাকার পরিবর্তে ডলার কামায়। জারাকে পারিবারিক সম্মতিতে বিবাহের শেষ মুহূর্তে এসে জানা যায়, শ্রেয়া এরফান চৌধুরীর মেয়ে। এরফান চৌধুরী তার মেয়ের প্রেমিককে হত্যার জন্য সাহায্য চায় শীর্ষ সন্ত্রাসী গডফাদার ওসমানের। ওসমান বাহিনী ও এরফান চৌধুরীর দলবল তাড়া করে ফেরে জেফ এবং শ্রেয়াকে।
অপূর্ব ও রানার পরিচালিত এই সিনেমায় বেশ কিছু ইতিবাচক দিক লক্ষ্যনীয়। এর অন্যতম হল, সিনেমার লোকেশন বাছাই। দেশের বিভিন্ন নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাকে ধন্যবাদ। আন্ডারওয়াল্ডের ডনের আখড়া হিসেবে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে নোঙ্গররত জাহাজের ব্যবহার বাংলাদেশী সিনেমায় একটু ভিন্নতার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এই ভিন্নতা ডনের গাজাখুরি উপস্থাপনে চোখে পড়ার মত গুরুত্ব পায় না। পরিচালকদ্বয়কে বুঝতে হবে, অ্যাকশন দৃশ্যে শত শত রাউন্ড গুলির বর্ষনে নায়ক নায়িকার কিছু না হলেও হঠাৎ পিস্তল হাতে নেয়া নায়কের প্রত্যেকটা গুলিতেই শত্রুর মৃত্যু - এরকম অবাস্তব দৃশ্য দেখতে দেখতে দর্শক সত্যিই ক্লান্ত। দৈনিক আমার দেশ-এ প্রকাশিত রিভিউ থেকে জানা গেল, সিনেমাটি এইচডিতে চিত্রায়িত করে পরে ৩৫মিমি-তে ব্লো-আপ করা হয়েছে। অবশ্য রিভিউকার এই পদ্ধতির নিন্দা করেছেন ঘোলা প্রিন্টের কারণে। তাত্ত্বিকভাবে এমনটা হওয়ার কথা নয়, অবশ্য ফিল্ম প্রজেক্টরের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। স্বল্প বাজেটে সিনেমা নির্মানের এই পদ্ধতি প্রচলিত হলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিরই উন্নয়ন।
[caption id="attachment_1465" align="alignright" width="300"]

সিনেমায় ভিলেন এরফান চৌধুরী চরিত্রে সোহেল রানার অভিনয় চলনসই। ভিন্নরকম চরিত্রে তার উপস্থিতি আশাব্যাঞ্জক। সহনায়ক-নায়িকা চরিত্রে আমান ও সিথিয়ার অভিনয় উল্লেখযোগ্য নয়। প্রধান নায়িকা জারা চরিত্রে শ্রেয়াও উতরে যেতে পারেন নি। নায়িকা হিসেবে তার সুন্দর মুখশ্রী যথাযোগ্য হলেও অভিনয়যোগ্যতা দুর্বল এবং সিনেমায় তার উপস্থাপনও অসংগতিপূর্ন। অবশ্য এক্ষেত্রে শ্রেয়ার তুলনায় পরিচালককে দায়ী করাই যুক্তিযুক্ত। শ্রেয়াকে শারীরিকভাবে উপস্থাপন দর্শক টানতে পারে হয়তো, কিন্তু দর্শক মনে স্থান দেয়ার জন্য অভিনয়যোগ্যতার বিকাশ বেশী দরকার।
সিনেমার প্রধান আকর্ষন নি:সন্দেহে নবাগত নায়ক জেফ চরিত্রে রূপদানকারী জেফ। মুখভর্তি শেভ না করা দাড়ি আর কালো গ্লাসে ঢাকা চোখ জেফকে আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থাপন করেছে। তুলনামূলকভাবে স্বল্প সংলাপ প্রদানে জেফ তুলনামূলকভাবে সপ্রভিত, অন্তত অভিষেক সিনেমা হিসেবে উতরে যায়। অভিনয় এবং এক্সপ্রেশন প্রদানের ক্ষেত্রে তাকে আরও দক্ষ হতে হবে এবং এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে আসন পোক্ত করার জন্য পেশীবহুল শরীর ধরে রাখার পাশাপাশি নৃত্য ও অ্যাকশন দৃশ্যেও পরিপক্কতা নিয়ে আসতে হবে। আর অবশ্যই এফডিসিতে তার পূর্বসূরীদের থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে যে, ইন্ডাস্ট্রিতে সম্মানের সাথে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে হলে অপ্রয়োজনীয় খোলামেলা বৃষ্টিভেজা অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করা ঠিক হবে না। বর্তমান সময়ের ক্রেজ শাকিব খান অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয়ের বদনাম এখনো ঘোচাতে পারেন নি।
'জীবনে তুমি মরনে তুমি' মুক্তি পেয়েছিল এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারী তারিখে। সেই তুলনায় সিনেমাটি বেশ পুরানোই বটে। শ্রীমঙ্গল শহরে রাধানাথ সিনেমা হলের "তৃপ্তি" (ডিসি) আসনের জনা দশেক দর্শক সহ রাত নয়টার মোট দর্শক ৫০ এর বেশী ছিল না। নতুন নায়ক জেফ-কে কতটা সাদরে গ্রহন করেছে দর্শক তা বোঝা যেত ফেব্রুয়ারীতে সিনেমাটি দেখলে। তবে, মুক্তির চার মাস পরে সিনেমা দেখার পরে এই উপলব্ধি হল, শাকিব খান তার দর্শকদের কাছে শাকিব খানই, তার বিকল্প হিসেবে নতুন নায়কদেরকে টিকে থাকাটা খুব সোজা হবে না। নতুন নায়ক জেফ এই সত্যি দ্রুত উপলব্ধি করুক, তার জন্য শুভকামনা।
যা না বললেই নয়:
হিন্দী সিনেমা আমার দেখা হয় খুব কম। ইমরান হাশমী অভিনীত 'জান্নাত' সিনেমাটিও আমার দেখা হয় নি। রাধানাথ থেকে বেরিয়ে আসার পরই ছোটভাইরা জানালো, 'জীবনে তুমি মরনেও তুমি' সিনেমাটির তিন চতুর্থাংশ জান্নাত সিনেমার হুবহু নকল, এমনকি গানের কথাগুলোও নাকি অনূদিত। তাদের এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব না,পাঠকদের কেউ হয়তো এ ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারবেন। ধন্যবাদ।
19 মন্তব্যসমূহ
এটা জান্নাত ছবির নকল। এক ছোট ভাইয়ের কারনে ছবিটা দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখানে জান্নাত ছবির কনসেপ্ট নকল করা হয়েছে। জেফ এর চরিত্র টা জান্নাত ছবির "অর্জুন" চরিত্র থেকে নেয়া হয়েছে। জান্নাত ছবিতে অর্জুন আগে থেকেই জুয়া খেলতো, আর এখানে নায়িকার জন্য জুয়া শুরু করেছে। পার্থক্য এতোটুকুই। তবে গানের ব্যাপারে শিওর না। গান গুলো স্কিপ করে দেখেছি। আপনার রিভিউ এর সাথে একমত।
উত্তরমুছুনঘটনাচক্রে জান্নাত আবছা আবছা দেখছি। জীবনে তুমি মরনে তুমি দেখার ইচ্ছা নাই।
উত্তরমুছুনতাই কইতে পারলাম না এই দুইটার মাঝে মিল কতটুকু
কাহিনীতে নতুনত্ব আছে মনে হচ্ছে............
উত্তরমুছুনযেহেতু কাহিনীকার কমল সরকার কোথাও থেকে মেরে দিতে পারেন এবং অবশ্যই কিছুটা গাজাখুরি হবে।
আপনার রিভিউ ভালো লাগল। ভালো লাগল তৃপ্তি হলে গিয়ে সিনেমা দেখা।
আরেকটা কথা....
বসুন্ধরায় শুভ বিবাহ দেখেছিলাম। এটাও অন্য ফরম্যাট থেকে ৩৫ মি.মি.- তে ট্রান্সফার করা। পর্দা কেমন যেন ফাটা ফাটা দেখাচ্ছিল। বেইলী রোড- সিনেমায়ও নাকি একই অবস্থা ছিলো।
কাহিণী পড়ে কিছু মিল খুজে পেলাম। ট্রেইলার দেখে মনে হলো কথা ঠিক। জান্নাতেরই নকল।
উত্তরমুছুনগানগুলো হবহ কপি না হলেও হিন্দি গানের প্রভাব স্পষ্ট
জান্নাতে নায়িকার নামও সম্ভবত জারা
সুন্দর রিভিউ ++
উত্তরমুছুনপুরাই নকল... নকলের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে বাঙালিরা যে কি মজা পায়?? নাম চরিত্র সবটাই নকল।
উত্তরমুছুনAmi bangla chobita dekhini...tobe jannat dekha ache...asole thik purapuri nokol na abar nokol o...tobe jannat-1 r jannat-2 ai duitar misel mone hocche...jodio jibone tumi morle tumi may be jannat-2 er release paise...jannat-1 a nakiyar baba don thakena tobe nayok juyari thake cricket juyari r police dara nayoker mrittu hoi...abar jannat-2 te nayok ostro babsayi thake r tar boss main antihero r nayika abar ai antiheror meye....
উত্তরমুছুনগানগুলোর মধ্যে একটা গান খূবই ভালো লাগছে - গানের শিরোনাম মনে নাই :(
উত্তরমুছুনতবে হোওওওও--ওওও টাইপের একটা টান আছে, এইটা দারুন। তবে আশংকা করেছি এই গানটাও নকল।
ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিকের একটা পারদেস সিনেমা থেকে ব্যবহার করা হয়েছে সেটা নোটিশ করতে পেরেছি। আর কিছু নয়।
ধন্যবাদ অরীত্র। ভালো থাকুন।
জীবনে তুমি মরনে তুমি - এমন কোন সিনেমা না যে দেখতে হবে। তবে, খুব একটা মন্দও লাগবে না। যদি সত্যিই নকল কাহিনী হয়ে থাকে তবে কিছু বলার নেই, কিন্তু এটাও সত্যি সিনেমায় স্মার্ট অনেক ব্যাপার এসেছে - সচরাচর এইগুলা দেখা যায় না।
উত্তরমুছুনএকটা দৃশ্যে জুয়া খেলার সময় পুলিশ আসা মাত্র জেফ তার মোবাইলের সিমটা সামনে রাখা আপেলের ভেতর পুরে দেয়। পুলিশ কল করে তাকে খুজে পায় না।
এমন একটা দৃশ্য সব দর্শক বুঝতে পারবে বলে আমার মনে হয় নি। তারপরও প্রয়োগটা ভালো :)
Boss jodio dos dhorchina tobuo boli apple er scene ta o jannat theke mara...
উত্তরমুছুনHmm chobita onekta copy.ei copy theke ber hoye aste hobe.
উত্তরমুছুনহেইচডি থেকে ৩৫ মিলিতে কনভার্ট একভাবেই করা হয়, তা হল হেইচডি দৃশ্যটা চালিয়ে সেটা ৩৫ মিলিতে শ্যুট করা। প্রফেশনাল কনভার্টিং ষ্টুডিওগুলো মোটা টাকার বিনিময়ে এটা চমতকার ভাবে করে থাকে। এবং তারপরে এটা বোঝার উপায় থাকে না যে সেটা কনভার্ট করা। হলিউডে হরদম এখন রেডক্যামে শ্যুট করা হচ্ছে। যদিও রেডক্যাম ৪কে রেজ্যুলেশনে শ্যুট করতে পারে। যা কিনা হেইচডি ক্যামের চেয়ে ৪ গুন। হেইচডি ১০২০ এর করে থাকে। তবে হলিউডে কিছু মেইনষ্ট্রীম মুভি এবং অসংখ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুভি সাধারন ১কে হে্ইচডি ক্যাম দিয়ে শ্যুট করে ৩৫ এ কনভার্ট করে প্রচার করা হয়েচে যা একেবারেই ৩৫ এর কাছাকাছি মানের।
উত্তরমুছুনতাই জীবনে তুমি মরনে তুমির প্রিন্টে ভেজাল থাকলে বলতে হবে এটা পরিচাল নিজেই প্রজেক্টরে চালিয়ে ৩৫ ক্যাম দিয়ে শ্যুট করে কনভার্টের চেষ্টা চালিয়ে খরচ বাচিয়েছে মনে হয়, তাই এই ঘোলা অবস্থা।
ইউরোপ আমেরিকার ষ্টুডিওগুলোতে ৯০ মিনিটের একটি মুভি হেইচডি থেকে ৩৫
তে কনভার্ট করতে মোটামোটি ২০/২৫ লাখ টাকা লাগে। তবে কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা ভারতে এরচেয়ে অনেক কম লাগবে নিশ্চই।
উত্তরমুছুনঅরিজিনালটা দেখেছেন?
উত্তরমুছুনধন্যবাদ এ আর :)
উত্তরমুছুনআবার আসবেন ...
দু:খজনক, নকল সিনেমার রিভিউ লিখে ফেললাম ;)
উত্তরমুছুনকাহিনী শুইনা আমার জান্নাত ছবির কথা মনে পইড়া গেল। জান্নাতের গান গুলোর ইংলিশ ট্রান্সলেট আমার কাছে লেখা আছে। এখন গান গুলোও মিলিয়ে দেইখতে হবে। ভালা থাইকেন।
উত্তরমুছুনস্বাগতম অতিরিক্ত একজন :)
উত্তরমুছুনমিলিয়ে দেখার পর জানাবেন কেমন হল। আবারও আসবেন :)
[…] রাধানাথ সিনেমাহলে। সেখানে চলছে ‘ জীবনে তুমি মরনে তুমি ‘। বালকরা কখনো সিনেমাহলে এফডিসি-র […]
উত্তরমুছুন