আলজেরিয়াকে স্বাধীন ঘোষনা করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গল কিছু সামরিক এবং সরকারী অফিসারের চক্ষুশূলে পরিনত হন। একদি বিদ্রোহী দল গড়ে উঠে, যার নাম 'ওএএস'। প্রেসিডেন্টকে হত্যার একটা চেষ্টা হয় বটে কিন্তু ব্যর্থ হ্ওয়ায় হামলাকারীরা এবং তাদের নেতৃবৃন্দ ফাসিকাষ্ঠে ঝুলেন। নতুন নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আধ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একজন হিটম্যানকে নিয়োগ দেয়া হয় - কাজ একটিই - চার্লস দ্য গলকে পৃথিবী থেকে সরাতে হবে। তার আসল নাম কেউ জানে না, শুধু জানে তার নাম 'দ্য জ্যাকল'।
এই দ্য জ্যাকল এর হত্যাপ্রস্তুতি এবং তাকে ঠেকানোর জন্য সরকারী প্রচেষ্টা - এই নিয়েই সিনেমা - দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল। ১৯৭৩ এ নির্মিত সিনেমা বলে হয়তো একটু পুরোনোই লাগবে সিনেমাটি, কিন্তু তাই বলে এর উত্তেজনা মোটেও পুরোনো হয় নি। পাক্কা ১৪০ মিনিটের এই সিনেমাটির গল্প নেয়া হয়েছে বিখ্যাত লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের একই নামের উপন্যাস থেকে। উপন্যাসটিই দ্য জ্যাকল নামের একজন হিটম্যানকে বিখ্যাত করে তোলে। দেখা যায়, নানাভাবে হিটম্যানের সাথে দ্য জ্যাকল নামটি মিশে আছে।
আমরা যে বর্ণ ট্রিলজি দেখে জেসন বর্ন এর ভক্ত বনে গেলাম, সেই জেসন বর্ণের মূল শত্রু কিন্তু আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিস ছিল না। রবার্ট রুডলাম তার বর্ণ আইডেন্টিটি উপন্যাসে কার্লোস নামে এক চরিত্রকে সৃষ্টি করেছেন যা উপন্যাসটিকে সিনেমার চেয়ে বহুগুনে সমৃদ্ধ করেছে- প্রকৃতপক্ষে সিনেমায় কার্লোস নামে কোন চরিত্রই নেই। এই কার্লোস এমন এক ব্যক্তি যে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন হত্যাকান্ডে অংশ নেয় অথচ কেউ তার নামটি জানে না, তার কোন ছবি কোথা্ও সংরক্ষিত নেই - আর জেসন বর্ণকে তৈরী করা হয়েছে এই কার্লোসকে ধরার জন্য। মজার ব্যাপার হলো, বর্ণ আইনেডেন্টিটিতে ভিলেন কার্লোস হলেও পরবর্তী খন্ডগুলোতে তার নাম হয়ে যায় কার্লোস দ্য জ্যাকল। কারণ কি?
কারণ ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের উপন্যাস দ্য ডে অব দ্যা জ্যকল মুক্তি পেয়ে গেছে এবং সমসাময়িক বিশ্বে কিছু ঘটনাও ঘটে গিয়েছে। ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের উপন্যাসের হিটম্যান নিজেকে দ্য জ্যাকল নামে পরিচয় প্রদান করে যার কোন পূর্ব পরিচয় কারো জানা ছিল না। এমনকি পুলিশও চেষ্টা করেও নানান ফন্দিফিকির করে তার আসল তথ্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হয়, তাই দ্য জ্যাকল এর মৃত্যুর সাথে সাথে তার আসল পরিচয়টিও হারিয়ে যায়।
[caption id="" align="aligncenter" width="485" caption="বাস্তবের কার্লোস দ্য জ্যাকল"]

উপন্যাসে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে, বাস্তবে যে ঘটে না তা নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিপাওয়া উপন্যাসটি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে বোধহয় এর সমসাময়িক কার্লোসের ভূমিকা বেশী। ইলিচ রেমিরেজ সানচেজ নামের এক ভেনিজুয়েলান ফ্রান্সে খুন করার দায়ে তখন ফেরার, বেশ কিছু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে তাকে খুজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় নিজেকে যুক্ত করে কার্লোস। প্যালেস্টাইন, লেবানন, ইরাক সহ বেশ কিছু দেশে ইসলামিস্ট, কম্যুনিস্ট এবং আরব ন্যাশনালিস্টদের সাহায্য করে সে - এ কাজে তার মিলিটারী প্রশিক্ষন বেশ সাহায্য করেছিল। ফেরার এই কার্লোস রিমিরেচ সানচেজকে মাথায় রেখেই হয়তো ফ্রেডিরিক ফোরসাইথ তার উপন্যাসটি লিখেছিলেন, সে সময় সানচেজ বাববার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন।
ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ সত্যিই এই কার্লোসকে নিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন কিনা সেটা জানা না গেলেও কার্লোস রূপান্তরিত হয় কার্লোস দ্য জ্যাকেল। একই সাথে রবার্ট লুডলামের উপন্যাসের কার্লোস রূপান্তরিত হয় কার্লোস দ্য জ্যাকল এ, যদিও দুজনের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন ছিল। সুতরাং কার্লোস দ্য জ্যাকল হয়ে গেল বিখ্যাত এক চরিত্র। বাস্তবের কার্লোস দ্য জ্যাকল অবশ্যই উপন্যাস বা সিনেমার মতো এত ধুরন্ধর হতে পারেনি, তাই ১৯৯৪ সালে সুদানে ধরা পরে এবং এখন জেলখানায় বন্দী জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে - কারাদন্ড যাবজ্জীবন।
[caption id="" align="aligncenter" width="500" caption="দ্য জ্যাকল চরিত্রে এডওয়ার্ড ফক্স"]

ফ্রেড জিনেমানের পরিচালনায় কার্লোস দ্য জ্যাকল সারা বিশ্বের দর্শকের সামনে আসে। এড্ওয়ার্ড ফক্স নামের একজন অখ্যাত অভিনেতাও পরিচিত হয়ে উঠেন তার এই চরিত্রটির মাধ্যমে। ফিল্ম এডিটিঙ এর জন্য অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেও জিততে পারেনি 'দ্য জ্যাকল'। ক্ষতি নেই, কারণ বিশ্বের সেরা সিনেপর্দার হিটম্যান এর তালিকায় দ্য জ্যাকল এর অবস্থান সবসময়ই সেরা দশে।
6 মন্তব্যসমূহ
Hmmmm..... Need to see this movie immediately
উত্তরমুছুন"Carlos" নামে আরেকটা movie আছে, যেটা এই একই ব্যক্তিকে (Ilich Ramirez Sanchez) ঘিরে, imdb rating ও বেশ ভালো। চাইলে দেখতে পারেন।
উত্তরমুছুনআমার কিশোর বয়সের ফ্যান্টাসি এই উপন্যাসটা, তখনও মুভি দেখা শুরু করিনি। সুযোগ পাবার পরে বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল মুভিটা দেখবার জন্য ___ আমার খুবই ভালো লাগছে মুভিটা, উপন্যাসের নেইল বাইটিং সাসপেন্স একশতভাগ না থাকলেও যা আছে যথেষ্টের চেয়ে বেশী। অনেক পছন্দের মুভি এটা। ___মনে পড়তেই নষ্টালজিক হয়ে গেলাম।
উত্তরমুছুনলেখাটা খুবই ভালো লাগছে ভাইয়া
:)
উত্তরমুছুনঅবশ্যি অবশ্যি :)
সিনেমাটার নাম শুনেছি। কিন্তু দেখা হয়ে উঠেনি। মনে রাখলাম। দেখে ফেলবো ইনশাল্লাহ :)
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আদ্রে :)
উত্তরমুছুনউপন্যাসকে সিনেমার রূপান্তর করা মোটেই সহজ নয়। মনের সিনেমা বাস্তবে নিয়ে আসা - সে এক দুরহ ব্যাপার - তবে সিনেমাটা মোটেই কম উপভোগ্য নয়।
ভালো থাকুন :)