অ্যাভাটার এবং ২০১২: দুটি সিনেমা

অ্যাভাটার
অ্যাভাটার সিনেমার পোস্টার

সায়েন্স ফিকশন মুভি

অ্যাভাটার এবং ২০১২ দুটোই হলিউডের সায়েন্স ফিকশন মুভি। সায়েন্স ফিকশন মুভির যাত্রা শুরু হয়েছিল সিনেমার ইতিহাসের একদম গোড়াতেই। ১৯০২ সালে নির্মিত একটি শর্ট ফিল্মকে প্রথম সায়েন্স ফিকশন মুভি হিসেবে গন্য করা হয়।

একশ বছরের ব্যবধানে সায়েন্স ফিকশন মুভি তার অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে সিনেমার বিভিন্ন বিভাগগুলোর মধ্যে, গড়ে তুলেছে সায়েন্স ফিকশন প্রেমী একদল ভক্ত দর্শক যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে নতুন নতুন সায়েন্স ফিকশন মুভির জন্য। আর তাদের প্রত্যাশা পূরন করার জন্যই প্রযোজক-পরিচালকরা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রত্যাশাতীত কিছু উপহার দেয়ার জন্য।

২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সায়েন্স ফিকশন মুভিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আলোচিত মুভি হল অ্যাভাটার। আরেকটি আলোচিত মুভির নাম ২০১২।

অ্যাভাটার

শুধু সায়েন্স ফিকশন নয় বরং সিনেমার ইতিহাসকে নতুন দিকে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে অ্যাভাটার মুভি। মুভির নির্মাতা জেমস ক্যামেরন। এর আগে ১৯৯৭ সালে টাইটানিক মুভি নির্মান করে সারা বিশ্বের মনযোগ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এবার আবার একই কাজ করলেন আগের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে অ্যাভাটার মুভির মাধ্যমে।

গত বছরের শেষ দিকে মুক্তি পেলেও এর নির্মান পরিকল্পনা সেই ১৯৯৪ সালে, টাইটানিক নির্মানেরও পূর্বে। সে সময়ই তিনি ৮০ পৃষ্ঠাব্যাপী স্ক্রিপ্ট তৈরী করে রেখেছিলেন কিন্তু নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরী প্রযুক্তি উপস্থিত ছিল না বলে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০৬ সাল পর্যন্ত, এমনটিই জানিয়েছেন পরিচালক ক্যামেরন । ফলাফল ১৯৯৯ সালে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা ২০০৯ এ সম্ভব হল। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির জন্য এক দশক অপেক্ষা – এ ধরনের বক্তব্য মুভিটির প্রতি প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

যে মুভি সারা বিশ্বকে কাপিয়ে দিয়েছে তার বাজেট সেরকম হবে এটাই স্বাভাবিক। অফিসিয়ালি ২৩৭ মিলিয়ন ডলার হিসেবে ঘোষনা করলেও সব মিলিয়ে নির্মান খরচ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে পৌছেছে এবং এর বাহিরে প্রচারের জন্যই ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত আরও দুএকটি মুভির মতো এ মুভিটিও দ্বিমাত্রিকতার পাশাপাশি ত্রিমাত্রিক ভার্সনও মুক্তি দিয়েছে। বিগ বাজেটের এই মুভির কাহিনী ২১৫৪ সালের পটভূমিকায় নির্মিত। অতীতের প্রায় সকল সাই-ফাই মুভির সাথে ভিন্নতা রয়েছে এর কাহিনীতেও – এখানে মানুষই আগ্রাসন চালিয়েছে ভিন্ন সৌরজগতের এক গ্রহে, যার নাম পেন্ডোরা। ভিনগ্রহবাসীদের ব্যবহৃত ভাষাটিও পরিচালকের নির্মিত।

জেমস ক্যামেরন এই মুভি নির্মানের জন্য উতসাহ পেয়েছেন শৈশবে পড়া বিভিন্ন গল্প-কাহিনী এবং বিশেষ করে এডগার রাইস রারোজ এর ‘জন কার্টার’ চরিত্র থেকে। হিন্দু ধর্ম থেকেও ধার নেয়া হয়েছে কিছু ধারনা। ছুবিটি নির্মানের জন্য ক্যামেরাটিও বিশেষ যত্নের সাথে তৈরী করা হয়েছিল। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্যাম ওর্থিংটোন এবং জো সালদানা। অসাধারণ সব ভিজ্যুয়াল এফেক্টের পরিমিত ব্যবহার মুভিটিকে বর্তমান রূপ দিতে সবচে’ বেশী ভূমিকা রেখেছে।

মুভিটি মুক্তিপাবার পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলছে, সেই সাথে ভাঙ্গছে পুরানো সকল বক্স অফিস রেকর্ড। নিজের আরেক কীর্তি টাইটানিক মুভির মাধ্যমে গড়া সব্বোর্চ্চ আয়ের রেকর্ড ভেঙ্গেছে অ্যাভাটার। এটাই প্রথম মুভি যা ২ বিলিয়নের বেশী পরিমান অর্থ ফেরত নিয়ে এসেছে। এই সাফল্যই ক্যামেরনকে ঘোষনা দিতে উতসাহ দিয়েছে – শীঘ্রই আসছে অ্যাভাটার মুভির সিক্যুয়েল।

২০১২

২০১২ পৃথিবী ধ্বংসের মুভি। পরিচালনা করেছেন রোনাল্ড এমরিখ, যিনি এর আগে দ্য প্যাট্রিয়ট, গডজিলা কিংবা ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে‘র মতো মুভি নির্মান করে আলোচিত হয়েছেন, জিতে নিয়েছেন অস্কারের মতো পুরস্কার। ২০১২ তার সর্বশেষ নির্মিত মুভি যার মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংসের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। কাহিনীর মূল চরিত্রে রয়েছেন শিউতের ইজোফর (আদ্রিয়ান হেমলে), একজন আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ, যিনি হঠাৎই জানতে পেরেছেন ভারতের এক তামার খনিতে বিভিন্ন কারনে সৃষ্ট প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন করছে। এ ধরনের সংবাদ উদ্বেগসৃষ্টিকারী কারণ এসমস্ত কারনে পৃথিবী আরেকটু বেশী হুমকীর সম্মুখীন হবে। সুতরাং আমেরিকান সরকারকে সচেতন করে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। অন্যদিকে রয়েছেন জন কুসাক (জ্যাকসন কার্টিস) যিনি একজন লেখক এবং পৃথিবীর এ অবস্থায় তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদেরকে বাচানোর।

পরিচালক ছবির কাহিনীকে শক্ত অবস্থানে দাড় করিয়েছেন মায়া সভ্যতার মিথ এবং ২০১২ সালের সংখ্যাগত প্রয়োগ থেকে। ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এমন একটি বিশ্বাসের প্রতিফলন রয়েছে ২০১২ মুভির মধ্যে। সৌর জগতে অবস্থা পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে তাপ বৃদ্ধি পায় ব্যাপক মাত্রায় এবং ফলাফলে বিচ্যূতি ঘটে পৃথিবীর ভারসাম্যে, শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। বিশাল বিশাল ভূমিকম্পের কারনে লস অ্যাঞ্জেলস শহর তলিয়ে যায় প্রশান্ত মহাসাগরে, বিশাল আকৃতির সুনামি পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করে নেয়। আর গুটিকয়েক লোকের প্রাণপণ চেষ্টা হিমালয় পর্বতে বিশাল নৌকার কাছে যেখানে উঠতে পারলে হয়তো বেচে যাবে কিছু প্রান, যারা আবার নতুন করে সভ্যতা গড়ে তুলবে।

পরিচালক রোনাল্ড বোধহয় পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার ব্যপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এর আগে ডে আফটার টুমরো নামের একটি মুভিতে তিনি বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘটনাকে স্থান দিয়েছেন। ২০১২ মুভিটি গ্রাহাম হ্যানকক রচিত বেস্টসেলার ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টস অব দ্য গড’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মান করেছেন নির্মাতা রোনাল্ড। সনি পিকচার্স তার এই মুভিটির স্ক্রিপ্ট গ্রহন করে তারই প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া পিকচার্সের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছে। প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে নির্মিত এই মুভিটির শ্যুটিং হয়েছে ভ্যাঙ্কুভারে, যদিও তা লস অ্যাঞ্জেলসেই হবার কথা ছিল।

মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ২২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করা মুভিটি বর্তমানে সর্ব্বোচ্চ আয়কৃত মুভির তালিকায় ৩১ নং অবস্থানে রয়েছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মুভিটি প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে যা রোনাল্ডের ২০০৪ সালে নির্মিত মুভি দ্য ডে আফটার টুমরো কে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যান্য ব্যবসা সফল মুভির মতোই এই মুভিটির একটি সিক্যুয়েল তৈরী হচ্ছে যার নাম ঠিক করা হয়েছে ২০১৩। অবশ্য এই নির্মিতব্য মুভিটি টিভি সিরিজ হিসেবেই প্রকাশিত হবার সম্ভাবনা বেশী।

কারেন্ট দিগন্ত পত্রিকা  মার্চ ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

3 Comments on “অ্যাভাটার এবং ২০১২: দুটি সিনেমা”

  1. প্রচলিত সায়েন্সফিকশন মুভিগুলো এক একটা বিশাল প্যারাডক্স, দেখে অ্যাপারেন্টলি মনে হবে, সায়েন্টিফিক কারিগরি দেখানোর জন্যই মুভি বানানো। কিন্তু প্রত্যেকটা সাই-ফাই মুভির পেছনে আছে বিশাল ও শক্তিশালী ফিলসফি/দর্শন।

    একজন দর্শক হিসেবে ম্যাট্রিক্স আমার কাছে একটা মাইলস্টোন।সবাই এই মুভিতে নায়ক নিও’র কারিশমা দেখে চমকিত হয়। প্রথম দর্শনে আমিও তাই হয়েছিলাম। কিন্তু পরে এর দার্শনিক দিকটি ধরতে পেরেছি।

    এভাটারও কারিগরি দিক থেকে চোখ ঝলসানো হলেও এর শক্তিশালী বার্তাটি হলো মানব মানসের প্রতিবাদ, কর্পোরেটাইজেশনের বিরুদ্ধে। হয়তো এই কারনেই এটি অস্কার পেলনা, কে জানে?

    আমার কানে এখনো বাজে জ্যাক সুলির সেই কথাগুলো, “the sky people gave us a msg, that they can take whatever they want. but we will give them a msg. that you can’t take whatever you want. this is our land.”

    what can be better protest to ‘institutionalization’ effect of corporation on society from James cameron than this?

  2. Did u saw the film ‘ Dance With The Wolves’……I think the philosophy of Avatar is taken from that film….:)

    1. Dance with the Wolves তো দেখি নাই বস। অ্যাভাটার এর কাহিনী নিয়া আমি হতাশ, এই টাইপের কাহিনী পুরানো, ক্যামেরনের মুন্সিয়ানা মেকিং এ, গল্পে না 🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *